Sunday, March 19, 2023

আত্মপরিচয়

আমি পৃথিবীর প্রথম পুরুষের মতো হতাশ।
আমি পৃথিবীর শেষ পুরুষের মতো লোভী।
আমি বকুলের মতো হার মেনে যাওয়া কাপুরুষ।
আমি সূর্যমুখীর মতো যুদ্ধ করে যাওয়া মহাবীর।

আমি জীবনানন্দের সেই প্রেম,
"একা- হরিণীর মতো আমাদের হৃদয় যখন!
জীবনের রোমাঞ্চের শেষ হলে ক্লান্তির মতন
পাণ্ডুর পাতার মতো শিশিরে শিশিরে ইতস্তত
আমরা ঘুমায়ে থাকি !- ছুটি লয়ে চ’লে যায় মন!"
আমি নজরুলের সেই বিদ্রোহী,
"করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা।
আমি দুর্দ্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দ্দম্ হ্যায়্ হর্দ্দম ভরপুর মদ।
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!!
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণি!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!"

আমি ফ্রেডির মতো চিৎকার করে গেয়ে উঠি,
"Mama, I don't want to die,
I sometimes wish I'd never been born at all."
আমি পিংক ফ্লয়েডের সুরে কেঁদে উঠি,
"The child is grown, the dream is gone
I have become comfortably numb"
আমি জন লেননের মতো শান্তি চেয়ে বলি,
"Imagine there's no countries, it isn't hard to do
Nothing to kill or die for, and no religion too
Imagine all the people living life in peace"
আমি লালনের মতো গলা ছেড়ে গাই,
"কে বলে মানুষ মরে,
ও মানুষ মরলে পরে বিচার হবে কার গো?"

আমি নবজাতকের মতো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি,
আমি মৃত্যুর শিয়রে বসে হাহাকারে হয়ে যাই নির্বাক।
আমি ঝড়ের মতো আতঙ্ক এনে দিই নিজের বুকে,
আমি মৃদু বৃষ্টির মতো সুখের দমকা হাওয়া ছড়াই।
আমি যুদ্ধের ময়দানে জলন্ত বারুদের মতো হিংস্র,
আমি ফজরের আজানে জেগে উঠা এক ভীরু।

Friday, March 17, 2023

যেভাবে বেঁচে থাকি আমরা

আমাদের ভোর হয়, সূর্য ওঠে
আমরা জেগে উঠি, সতেজ হই।
চোখে জল দিই, স্নান করি।
আমরা বেরিয়ে পরি, দূরে যাই—
ইস্কুল, কলেজ, খেত, খামার, অফিস
দূরে, আরোও দূরে—
পৃথিবীর অন্ধকারে মিশে যাই সূর্যের যৌবনে।

আমরা ক্লান্ত হই, উদাস হই
গোধুলি রঙের অবসাদে শান্ত থাকি।
আমরা ব্যস্ত হই, ঘরে ফিরি
জীবনের সব ভুল হিসেবের ফাঁকে একটু হাসি।
আমরা ভালোবাসি, কথা বলি
রাতের অন্ধকারে সুখের আলো খুঁজি।

আমরা মূলত হতাশ, আমরা ব্যর্থ
নিজেদের বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বাণিজ্য নেই।
তারপর, নিজেদের বিক্রি করা টাকায় বাজার করি, তিন বেলা ভাত খাই।
কিংবা, মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। 

Thursday, March 9, 2023

দুঃখের হাস্যধ্বনি

এই ধুলো ধুলো শহর, ধুলোর মতো হৃদয়ে জমে থাকা সব ক্ষত, শহুরে মানুষ, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা প্রাক্তন, জীবনের অবসাদে থমকে যাওয়া আমাদের সুখ, অবাক করে দিয়ে হেসে ওঠা আমাদের দুঃখ, কর্কশ হর্ণ বাজিয়ে যাওয়া ট্রাফিক জ্যাম, ব্যবহারযোগ্যবিহীন ফুটপাতে ছুটে চলা মানুষের ভীড়, সিগারেট ফুকতে থাকা বেকারের জীবন, হতাশার নদীতে ডুবে যাওয়া একটা মস্তিষ্ক, ক্ষুদার্ত পেট নিয়ে হেঁটে যাওয়া শূন্য মানিব্যাগ এবং পৃথিবীর সকল বিরহ আমাকে ভালোবেসেছিলো বহুবছর আগের কোনো এক চৈত্রের মধ্যদুপুরে। যেই দুপুরে আমি নিঃসঙ্গ কুকুরের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম কোন উদাস পাখির শুষ্ক চোখের কালোতে। 

বৈশাখের ঝড়ে কুড়িয়ে পাওয়া আমের হিসাব কষার মত জীবনের যে কয়টি বছর শিমুল ফুলের মতো ঝরে গেলো, অবসাদমাখা ক্লান্তিকর হতাশা ছাড়া কিবা উপহার দিয়েছি তাকে? শৈশবের শিলাবৃষ্টিতে কুড়িয়ে পাওয়া বরফের মতো কিছু সুখ জমিয়েছিলাম বুকপকেটে। দু’দণ্ড স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে টের পাই সুখের বরফ গলে ঝরছে আত্মঘৃণার জলপ্রপাত।

যে সুখের সাথে বনিবনা হয়নি আমার বাবার, সেই সুখকে খুন করেছি নিজ হাতে। যে শান্তির সাথে দেখা হয়নি আমার মায়ের, সেই শান্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছি বহুবার। যে দুঃখকে খুব আদরে পুষেছিলো আমার বাবা মা, সেই দুঃখ সয়ং আমি নিজেই। আয়নায় তাকালে সেই দুঃখ ভেসে উঠে বলে ভেঙে ফেলেছি সেই অন্ধকারের আয়না। আত্মার বেচাকেনা হয় না বলে আজও বাঁচিয়ে রেখেছি বাবা মার দুঃখকে। নিঃসন্দেহে আমি একজন সার্থক প্রতারক। যে কিনা নিজের মায়ের স্বপ্ন বিক্রি করে দিয়েছে কোনো এক তাসের ঘরে।

অন্ধের অন্ধকার

বিষাদ দিনযাপনের ইতিহাস থাকুক শহর জুড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন দেখতে পাই, নষ্ট হওয়া খাবারের গন্ধে কতটা উন্মাদ দাঁড় কাক। ঘৃণাভরা কোলাহল ভাঙলেই য...