এই ধুলো ধুলো শহর, ধুলোর মতো হৃদয়ে জমে থাকা সব ক্ষত, শহুরে মানুষ, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা প্রাক্তন, জীবনের অবসাদে থমকে যাওয়া আমাদের সুখ, অবাক করে দিয়ে হেসে ওঠা আমাদের দুঃখ, কর্কশ হর্ণ বাজিয়ে যাওয়া ট্রাফিক জ্যাম, ব্যবহারযোগ্যবিহীন ফুটপাতে ছুটে চলা মানুষের ভীড়, সিগারেট ফুকতে থাকা বেকারের জীবন, হতাশার নদীতে ডুবে যাওয়া একটা মস্তিষ্ক, ক্ষুদার্ত পেট নিয়ে হেঁটে যাওয়া শূন্য মানিব্যাগ এবং পৃথিবীর সকল বিরহ আমাকে ভালোবেসেছিলো বহুবছর আগের কোনো এক চৈত্রের মধ্যদুপুরে। যেই দুপুরে আমি নিঃসঙ্গ কুকুরের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম কোন উদাস পাখির শুষ্ক চোখের কালোতে।
বৈশাখের ঝড়ে কুড়িয়ে পাওয়া আমের হিসাব কষার মত জীবনের যে কয়টি বছর শিমুল ফুলের মতো ঝরে গেলো, অবসাদমাখা ক্লান্তিকর হতাশা ছাড়া কিবা উপহার দিয়েছি তাকে? শৈশবের শিলাবৃষ্টিতে কুড়িয়ে পাওয়া বরফের মতো কিছু সুখ জমিয়েছিলাম বুকপকেটে। দু’দণ্ড স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে টের পাই সুখের বরফ গলে ঝরছে আত্মঘৃণার জলপ্রপাত।
যে সুখের সাথে বনিবনা হয়নি আমার বাবার, সেই সুখকে খুন করেছি নিজ হাতে। যে শান্তির সাথে দেখা হয়নি আমার মায়ের, সেই শান্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছি বহুবার। যে দুঃখকে খুব আদরে পুষেছিলো আমার বাবা মা, সেই দুঃখ সয়ং আমি নিজেই। আয়নায় তাকালে সেই দুঃখ ভেসে উঠে বলে ভেঙে ফেলেছি সেই অন্ধকারের আয়না। আত্মার বেচাকেনা হয় না বলে আজও বাঁচিয়ে রেখেছি বাবা মার দুঃখকে। নিঃসন্দেহে আমি একজন সার্থক প্রতারক। যে কিনা নিজের মায়ের স্বপ্ন বিক্রি করে দিয়েছে কোনো এক তাসের ঘরে।
No comments:
Post a Comment