Saturday, April 23, 2022

শহুরে চিড়িয়া

ফুটপাত, সমান্তরাল ল্যামপোষ্ট,
পথিকের চোখ, খুঁজে নেওয়া আকাশ;
রং বদলে দেওয়া সোডিয়াম আলো।
শব্দের শরীরে মিশে থাকা, 
চলমান যান্ত্রিক কোলাহল, যানজট;
এবং ভীড়ের মাঝে একাকিত্বতা।
উঁচু নিচু দালানের জানালায়,
মাঝরাত্তিরের কান্না;
ঘুম কেড়ে নেয় চাঁদ;— আলোতে মিলায়।

এত এত রঙ, এত এত কোলাহল,
জানান দেয় এই শহর বেঁচে আছে।
তবু এ শহর বেঁচে থাকে !
বেঁচে থাকে এই শহরের চিড়িয়াদের
বিভ্রান্তিকর  হাসিমুখ, দ্বিতীয় মুখ।

Thursday, April 21, 2022

আত্নপ্রেম

নিজেকে এতোটা ভালোবাসি, এতোটা ভালোবাসি
যতটা ভালোবেসে কোনো বুলেট ছুটে যায় হৃদপিন্ডে।
নিজেকে এতো ঘৃণা করি, এতো ঘৃণা করি
যতটা ঘৃণা করলে নর্দমায় ফুটে উঠে একটি ফুল।

নিজের সাথে নিজের বনিবনা হয়নি বলে,
বারংবার গলা চেপে ধরেছি নিজের আত্মার।
শ্বাসবদ্ধ আত্মা তখন থুথু ফেলে আমার চোখে;
তখন আমার ঘোর কাটে। তারপর,
নিজের আত্মার গলা থেকে হাত নামিয়ে
থুথুমাখা চোখে ঝাপসা ঝাপসা দৃশ্য দেখি,
নিজের থেকে নিজে কতটা দূরে ছুটে গেছি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আত্মা জিজ্ঞেস করে,
"ভালোবেসে কখনো জড়িয়ে ধরেছিস নিজেকে?"

অন্ধকারকে যতটা ভালোবাসি,
ততটা ভালো নিজেকে বাসতে পারিনি বলে,
সূর্যের সকল আলো আমাকে করেছে অবহেলা।
যে আলোর ভয়ে অন্ধকারের কুয়ো থেকে বের হইনি কোনোদিন,
সেই আলোর অভাবেই কখনো দেখতে পারিনি নিজেকে।

এইসব বিভ্রান্তময় ঘোরের দিন শেষ হলে,
বেঁচে থাকার সাহস নিয়ে অন্ধকারের কুয়ো থেকে বের হলাম একদিন।
তারপর আমি দেখতে পারি,
নিজেকে সুখী রাখার সবকটি গুপ্তমন্ত্র নিজের শরীরেই লেখা।

প্রেমহীন প্রেম

উদ্যানে প্রেম, প্রেমের সংশয়।
গাঢ়ত্ব হারায় প্রেমিকার ঠোটের রং
প্রেমিকার লজ্জামাখা চোখ,
প্রেমিকের বিলাসী চাহনি।
ভেসে যাওয়া শীতল হাওয়া বেখেয়াল ,
প্রেমিকার চুলের গন্ধ প্রকট।

শরীরের দেওয়াল ঘেষে জন্ম নেওয়া প্রেম,
তবু প্রেম বেঁচে থাকে মানবীর শরীরে।
এ প্রেম খুন হয় ক্যালেন্ডারে ক্যালেন্ডারে।
উচ্ছিষ্ট হয় গোলাপ, প্রেমিকার প্রেম,
অচেনা হয় প্রেমিক, অপচয় হয় প্রেম।

Saturday, April 16, 2022

বিধ্বস্ত মানব

 একটা শরীর, ব্যর্থতার ছায়াতে ডুবে থাকা কোন এক মানুষের শরীর। যার প্রতিটি লোমকোপে জ্বলছে আত্নঘৃণার আগুন। যে আগুনে পুড়ে শরীর হয়ে গেছে কঙ্কাল। যে কঙ্কাল বয়ে নিয়ে চলে শুধুমাত্র একটি প্রাণ। যে প্রাণ ভুলে গেছে ভালোবাসে, ভালোবাসা পাওয়ার অভাবে যে প্রাণ ভুলে গেছে ভালোবাসার স্বাদ। পুড়ে যাওয়া শরীরে শুধুমাত্র দুটি চোখ ছলছল করছে। যেমন ছলছল করে, ভোরের সকালে ঘাসের উপর জমে থাকা দুই ফোটা শিশিরকণা। যে চোখ চায়, এক জোড়া চোখের নির্মল দৃষ্টি। যে দৃষ্টিতে থাকবে না কোনো বিনিময়, থাকবে শুধুই ভালোবাসা।

ঘৃণার রঙ নিয়ে বেঁচে থাকা সেই কঙ্কাল ছুটে চলে মানুষের থেকে অনেক দূরে। যতদূরে গেলে কোনো প্রাণ চোখ মেলে দেখতে পারবে না তার শরীরের আর্তনাদ। যতদূরে গেলে ছড়াবে না তার পঁচে যাওয়া শরীরের বিষাদের ঘ্রাণ। নদিতীরের শীতল বাতাসের বেগের মতো ছুটে চলে সে শরীর। ছুটতে ছুটতে মিশে যায় সূর্যের অন্ধকারে। যেখানে সূর্যের অভিশাপে শুকিয়ে গিয়েছে চোখের নির্মলতা। অন্ধকারের আশির্বাদে শরীর পেয়েছে বিষাদের কালো রঙ।

তারপর বাতাসে শুকনো পাতার ওলটপালটের মতো করে হেঁটে চলছে কোনো উদ্দেশ্যবিহীন গন্তব্যে। সূর্যের মৃত্যুর পর সে পৌঁছে গেছে এক অভিশপ্ত লোকালয়ে। যেখানে মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র লক্ষ নিজেকে বৃক্ষ বানানো। যে বুলেটের আঘাতে নিহত হয়েছে নিজেদেরই পূর্বপুরুষ, সেই বুলেটের বারুদের গন্ধ তাদের বেঁচে থাকার উপকরণ। 

বিভ্রান্ত সব মানুষের সংস্পর্শে পুড়ে যাওয়া শরীরে জন্ম নিয়েছে নতুন ত্বক। যার প্রতিটি কোষের সংযোগস্থলে পরগাছা হয়ে জন্ম নিয়েছে হতাশা। তার পুড়ে যাওয়া শরীরের ছাই তাকে উপহার দিয়েছে আত্নঘৃণার পোষাক। মানুষ হয়ে যে শরীরের জন্ম হয়েছিলো, সেই শরীর এখন নিজেকে বৃক্ষ বানাতে ব্যস্ত। নিজেকে পুতে দেয়ার জন্য ব্যর্থতার কোদাল দিয়ে খনন করে চলছে সময়ের ভূমি। নিজেকে বৃক্ষে পরিণত করাটাই এখন তার একমাত্র লক্ষ। যে লক্ষ তাকে নির্ধারণ করে দিয়েছে এই অভিশপ্ত মানবসভ্যতা। 

বিষাদময় এই শরীর তবুও স্বপ্ন দেখে। তবু স্বপ্ন দেখে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার। ইচ্ছে করে ব্যর্থতার কোদালকে পুড়িয়ে দিয়ে অভিশপ্ত লোকালয় থেকে অনেক দূরে চলে যেতে। যতদূর চলে গেলে কেউ জানতে পারবে না তার আর্তনাদের গল্প। যতদূর ছুটে গেলে সে খুঁজে পাবে নির্মল চোখ, অভিনয়হীনতা। যেখানে সে খুঁজে পাবে নির্মল দৃষ্টি, ভালোবাসা। যেখানে মানুষজনের লক্ষ নিজেকে বৃক্ষ বানানো নয়; বরং জীবনকে সহজ করা। যতটা সহজ করলে কেউ তার নিজের সাথে নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। যে লোকালয় স্বপ্নভঙ্গের অপরাধে সুখকে হত্যা করে না। বরং, বিচ্ছেদের আশির্বাদে ভালোবাসার চাষাবাদ করে।

যে প্রেম আমি চাই

একটা ঘর বানাতে চাই, যেখানে-
অদূরে থাকবে স্বচ্ছনদী,
কিনারা ঘেঁষে বালির চিকচিক;
কাশফুলের সাদা রঙের দোল,
দূর্বাঘাসে ছেয়ে যাবে মরুভূমি।

একটা মানুষের সঙ্গ চাই, যে-
পড়ন্ত বিকেলের ঠাণ্ডাবাতাসে
নীল শাড়ি নীল চুড়ি পড়ে
সুরেলা বাতাসে আবেগ উড়াবে।
ঘনিয়ে আসা আধারে কালো চুল উড়াবে,
ঐপাশের সাদা কাশফুল তার সঙ্গ দিবে।

একজোড়া চোখ চাই, যেখানে-
আমার নির্ঘুম চোখ ভুলে যাবে আমাবস্যা,
সঙ্গ দিবে আমার চন্দ্রবিলাসীতার।
বুঝে নিবে সকল ভাষার দায়ভার;
মলিন থাকবে আমার অপেক্ষায়,
অশ্রু ঝরবে আমার ভালবাসায়।

Sunday, April 10, 2022

মৃত্যু যতদূর- ততদূর উদাসীনতা

 ধরেন আপনি জেনে গেছেন আপনার জীবনে কতটুকু সময় বাকি আছে। ধরে নেন সেই সময় মাত্র এক ঘন্টা। ঠিক এক ঘন্টা পরে আপনার মৃত্যু। তাহলে আপনি কি করতেন? পরিবার এবং প্রিয় মানুষকে সময় দিতেন? কিংবা একদিন বা ২৪ ঘন্টা সময় আছে। তাহলে কি করতেন? আগের করণীয়তার সাথে তওবা করতেন? নিজের পাপ কাজের জন্য কান্নাকাটি করতেন? যদি এক সপ্তাহ থাকতো? তাহলে তার সাথে আর কি কি করতেন? যাদের কাছে নিজেকে দোষী মনে হয়  তাদের কাছে ক্ষমা চাইতেন? কিংবা আর্থিক ঋণমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতেন? যদি এক মাস সময় পেতেন? আপন মানুষদের একটু বেশি খুশি রাখার চেষ্টা করতেন? 

এমন যদি হতো আপনাকে সেই নির্দিষ্ট সময় বলে দেওয়া হলো, এবং সেই সময় পঞ্চাশ বছর। তাহলে? তাহলে কিচ্ছু করতেন না। প্রথম উনপঞ্চাশ বছর একদম বেখেয়ালী জীবনযাপন করতেন। শেষের এক বছরে সেই এক্টিভিটিজ। আসলে আমরা সময়সীমা জেনে গেলেই সাবধান হই। শুধুমাত্র তখনই নিজেকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পরি। কিন্তু জীবন তো আমাদের সময়সীমা জানায় না। জীবন চলে লিনিয়ার গতিতে। যখনই তার শেষ সীমানা খুঁজে পায়, তখনই শেষ হয়ে যায়। মূলত জীবন নিজেও জানে না তার সীমানা কতদূর।

আমরা ধরেই নিই যে, আমরা নাতি নাতনীর যৌবন দেখে মারা যাবো। সেই হিসেব করেই তো সুদূর প্রসারী চিন্তা করি, পরিকল্পনা করি, বাস্তবায়ন করি। জীবন হইলো বেলুনের মতো। যেকোনো সময় ঠাস কইরা ফুইটা যাইতে পারে, যাইতেই পারে। কিংবা জীবন একটি সুন্দর ফুলের মতো, কলি থেকে ফুলের সর্বোচ্চ সৌন্দর্য ভেদ করে একসময় শুকিয়ে ঝরে পরবে, ঝরে পরবেই। এইযে জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, এইটা কিন্তু নিশ্চিত। গণিতের ভাষায় সম্ভাবনা এক বা সম্পূর্ণ। এইটা আমরা সবাই জানি, বিশ্বাস করি। কিন্তু অনুভব করি না। অনুভব করতে না পারাতে কি হচ্ছে? বিশ্বাসটা শুধু বাহ্যিক রূপে দাঁড়িয়ে আছে, ভাষ্কর্যের মতো। ভাষ্কর্যে শরীর থাকে, প্রাণ থাকে না।

অন্ধের অন্ধকার

বিষাদ দিনযাপনের ইতিহাস থাকুক শহর জুড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন দেখতে পাই, নষ্ট হওয়া খাবারের গন্ধে কতটা উন্মাদ দাঁড় কাক। ঘৃণাভরা কোলাহল ভাঙলেই য...