Thursday, March 14, 2024

অন্ধের অন্ধকার

বিষাদ দিনযাপনের ইতিহাস থাকুক শহর জুড়ে।

ঘর থেকে বের হলেই যেন দেখতে পাই,
নষ্ট হওয়া খাবারের গন্ধে কতটা উন্মাদ দাঁড় কাক।
ঘৃণাভরা কোলাহল ভাঙলেই যেন চোখে ভাসে,
নর্দমায় ভেসে যাওয়া নবজাতকের লাশ।
পাশ ফিরে তাকালেই যেন দৃশ্য দেখি,
উলঙ্গ এক শিশুর অনাহারী মুখ।

এইসব শহুরে আর্তনাদ না শোনার ভান করে আমি উঠে বসবো মার্সিডিজ। হনহন করে ছুটে যাবো দূরে। বহু দূরের কোনো ট্রাফিক সিগনালে থমকে দাঁড়াবে গাড়ি। জানালার কাচে আঙুল রাখবে শ্যাম বর্ণের কিশোরী। এক হাত ভর্তি সাজানো ফুলের মালা; অন্য হাতে সুখ-দুঃখের জোয়ার-ভাটা। ফুল নয়, হাসি বিক্রি করা কিশোরীর চোখ দেখে আমি জেনে যাবো— গরীবের কোনো বয়স নেই।

শহরের পর শহর, গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে
আমি ছুটে যাবো সমুদ্রের খুব কাছে।
অসীম শূন্যতার অন্ধকারে চেয়ে
আমি প্রতিধ্বনি খুঁজবো আমার দুঃখের।
দিগঙ্গনার কণ্ঠ ভেসে আসবে বাতাসে; জানাবে সে—
হৃদয়ভাঙা দুঃখের সকল ইতিহাস
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমারই শরীরে।

Wednesday, November 29, 2023

অবশিষ্ট হৃদয়ের শব্দহীন চিৎকার

ভেঙে যাওয়া তামাকের ধোঁয়া তবু পথ চিনে,
আমার এ হৃদয় তবে কেন অন্ধকার প্রিয়!

অন্য কারোর নয়; স্বয়ং আমার নিজের—
বিশ্বাস ভুলে গেছে গোপন ইতিহাস,
আত্মা ভুলে গেছে বয়সের হিসেব,
আর ভয় ভুলে গেছে মৃত্যুর নাম।

শরীর থেকে বেরিয়ে নগ্ন হয়ে ঘুরেছিলাম বহুদিন,
গিয়েছি শহরের কাছে, গ্রামের কাছে, মানুষের কাছে;
আরও দূরে কোনো পাহাড় চূড়ায়— কিংবা সাগরের কিনার।
শুনেছি হৃদয় ভাঙার সকল আর্তনাদ; গুনগুন গান গায়।
দেখেছি চোখের সীমানা দেয়ালে আটকায়; অন্ধকার ডানা ঝাপটায়।

আজকাল কফের সাথে মিশে থাকে তামাকের গন্ধ,
যেন গলা চিরে বের হয়ে আসছে ফুসফুসক্ষত রক্ত।
কাকতালীয় কোনো ঘুমের ঘোরে আমি ভীষণ খুঁজেছি,
কোথাও পাইনি নিজেকে, শুধু একটা আয়না মিথ্যে বলেছে।

কারা যেন ছুটে এসে দোতলা ছাদের ঘরে
আমাকেও নিলো ডেকে ভোরের ঘুম ভাঙিয়ে।
কেড়ে নিলো সবুজ ধানক্ষেত; পাখিদের গান
মুছে দিলো রাতের হাওয়া; জোনাকের রঙ
পরে থাকে দূর্বা ঘাস; শিশিরের অভিমান।

এরপর একদিন অন্ধকার রাতে, নিখোঁজ বিজ্ঞাপনে
ছায়ার মতো গল্প বলে যাবে; অন্ধকার প্রিয় হৃদয়।—
পৃথিবী শেখালো আমাকে বাণিজ্য
আমি বিনিয়োগ করলাম ভালোবাসা।
হৃদয়ের লেনলেন সাক্ষী রাখে না বলে,
কেউ জানলো না হাহাকারের ইতিহাস
কেউ শুনলো না শূন্যতার চিৎকার।

Friday, November 24, 2023

সুখী নির্বাসন

 শশ্মান আমার ভিটা না।
তোমরা আমাকে ঘরহীন করায়,
শশ্মানে ঠায় নিতে বাধ্য আমি।

তোমরা কি অন্য কোথাও যেতে বলছো?
রেলস্টেশন, সদরঘাট, ফুটওভারব্রীজ?
সব ঘরহীনদের একঘরে করতে চাইছো?
ঘর ছাড়া কি একঘরে হয়?
তোমরা আমার ঘর কেড়ে,
ঘুমের জায়গা নিয়ে ভাবো?
ভাবো? নাকি তাচ্ছিল্য করো?
ঠাট্টা করো? — উপহাস?

শশ্মানে আমি লাশ দেখি
পুড়া মানুষের গন্ধ শুকি
বৃষ্টিস্নাত ছাইয়ের স্পর্ষ মাখি
মৃত আত্মার গল্প শুনি
এবং তার দুঃখ খাই।

Monday, August 21, 2023

মাতাল প্রেমিক

মাতাল হয়ে একদিন ঈশ্বরকে বলেছিলাম,
সুখ এনে দাও; আমি ভালোবাসা শিখে নিবো।
ঈশ্বর সুখ এনে দিয়েছিলো ঠিকই,
আমি ভালোবাসতে পারিনি তবুও।

চাঁদ-সূর্যের হিসেব কষতে কষতে যখন
মৃত্যুর দুয়ারে এসে জীবন ছেড়েছে হাল!
আমি দেখেছি-ভেবেছি; জেনেছি সর্বজ্ঞানে –
চাওয়াটাই ছিলো ভুল; এ জীবন নদীর পাড়।

আমি চাইনি প্রেম, খুঁজিনি হৃদয়;
জীবন গেলো স্বার্থের উপর।
ঈশ্বর তবু অপ্রেমিক নয়! —
বেসেছে ভালো, দিয়েছে হৃদয়।

প্রভুর সেই একতরফা প্রেমে,
আমি শুধু খুঁজিনি তাঁরেই।
খুঁজেছি সুখ, খুঁজেছি শান্তি; —
অথচ শান্তির ঠিকানা ‘ইসলাম’ জানি। 

Tuesday, August 8, 2023

Had a friend once, in a room

গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে এক কিউব আইস ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে এলিয়ে পরলো ইরিকা। বিছানায় পা ছড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে মনের সুখে তামাকের শেষ টানের ধোঁয়া ছাড়লো রবি। ধীরে ধীরে গ্লাসের সবটুকু হুইস্কি শেষ করে কম্পিউটারে "এনাদার নাইট টু ক্রাই" গান ছেড়ে চেয়ার ঘুরিয়ে রবির দিকে মুখ ঘুরালো ইরিকা। জানালার কাচে লেগে আছে ছিটকে আসা বৃষ্টির পানি, সেই পানি গাল বেয়ে নেমে আসা চোখের পানির মতো গড়িয়ে পরছে। নেমে আসা সেই পানি থেকে চোখ সরিয়ে ইরিকার দিকে তাকালো রবি। বললো, "শুধু মানুষ নয়; এই শহর, এই গ্রাম, এই পৃথিবীও মনে হয় কাঁদে। সেই কান্নার জলে কেউ কেউ খুঁজে নেয় আনন্দ, আর যারা আনন্দ খুঁজতে জানে না- তাদের জন্য প্রকৃতির এই কান্না ভীষণ বিরক্তিকর।" একটা সিগারেট ধরিয়ে ফুসফুস ভরে ধোঁয়া টেনে নিয়ে ইরিকা প্রশ্ন করলো, "যারা আনন্দ খুঁজে নিতে জানে, তাদের কাছে কি প্রকৃতির কান্না বিরক্তিকর হতে পারে না?"

কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো আর জানালা ভেদ করে আসা চাঁদের আলোয় ঘরের অন্ধকার কেটে গেলেও, ঠিক আলোকিত ঘর বলা যায় না। তবু দুজন দেখতে পারছে দুজনের চোখ, মুখ, ঠোঁটের কম্পন। অলস দৃষ্টিতে ইরিকার দিকে তাকিয়ে আছে রবি। পলকবিহীন চোখে ইরিকা চেয়ে আছে রবির চোখে। যেনো মানুষ নয়, কোনো শিল্পীর তৈরী ভাষ্কর্যের চোখ দেখে বুঝার চেষ্টা করছে, শিল্পী এখানে কোন চরিত্রটি তুলে ধরতে চেয়েছেন। দুজনেই চুপচাপ, প্লে লিস্টের গান বদলে বাজতে শুরু করলো "হোয়েন এ ব্লাইন্ড ম্যান ক্রাইস"।

দুজনের নীরবতা কাটাতে রবি চোখ ঘুরিয়ে ইরিকার সমস্ত মুখ দেখে নিয়ে প্রশ্ন করলো, "কি দেখছো?"। প্রশ্নটা ইরিকার চোখ বা চোখের দৃষ্টি কোনোটাকেই নাড়া দিলো না। শুধু ঠোঁট নেড়ে মৃত মানুষের মতো উত্তর দিলো, "দেখছি না, ভাবছি। ভাবছি, মানুষের সাথে মানুষের শেষ দেখা কবে হয়েছিলো!"।


Friday, June 16, 2023

বাবাদের ঘরে ফেরা

সূর্যের শেষ আলোয় হাতঘড়িতে চোখ রেখে দেখি,
ঘণ্টা আর মিনিটের কাটা মুখ ঘুরিয়ে অভিমান করেছে।
পশ্চিম আকাশের শীতল লাল আলো,
কমিয়ে দিচ্ছে এই শহরের ক্লান্ত উত্তাপ।
অফিসের পাশে এই ছোট্ট টং-য়ে
রোজ এক কাপ চা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকি,
আমার ছেলের জন্য আমি কতখানি বদলেছি।
দুই বছর আগে এই টং-য়ের সামনে দাঁড়ালেই,
আজিজ মামা একটা সিগারেট এগিয়ে দিতেন।
অফিস শেষে ঘরে ফিরে; মুহীবের গালে চুমো দিতে গেলে–
ওর মা ধমকাতো বলে ছেড়ে দিয়েছি।
অফিস শেষে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে
মুহীব ঘুমিয়ে যায় বলে; আড্ডা দেওয়া কমিয়েছি।
এইসব ভাবতে ভাবতে আমি অনুভব করি,
ছোট বেলায় এক ঝুম বৃষ্টির রাতে, কেন —
আমার বাবা বাড়ি ফিরেছিলো ঠিক ন’টা বাজার আগেই।

একদিন আমি বাবার জন্য ভাত নিয়ে গেলাম নদীর ওপার।
পাটের আঁটির উপর বসে বাবা আর আমি ভাত খাচ্ছিলাম।
সাদা ভাতের উপর সাজিয়ে রাখা পাটশাক,
সরিষার তেলে ভাজা কালো শুকনো মরিচ আর লবণের উপর—
খইয়ের মতো ফুটতে শুরু করলো বৃষ্টির তীক্ষ্ণ জল।
তার উপর ডাল ঢেলে দিতেই স্নিগ্ধ আনন্দে মন ভরে যায়।
পাটের আঁটিগুলো চালার মতো বেঁধে ভেলা বানিয়ে,
বৃষ্টির ভেতর নদী পার হচ্ছিলাম দুজন।
এখন আমি টের পাই, পাটের ভেলায় বসে–
লগিতে ধাক্কা দিতে দিতে; কেন আমার বাবা
আমার চোখে চেয়ে হুট করে হেসে উঠেছিলো।

প্রায় বৃহস্পতিবারের রাতে আমার,
ঘরে ফিরতে ফিরতে মাঝরাত হয়ে যায়।
তবুও দেখি মুহীব ঘুমোয়নি।
আমার উপর অভিমান করে জেগে থাকে;
অথচ আমি যাওয়া মাত্রই গলা ঝড়িয়ে লাফিয়ে উঠে।
তারপর ওর মা'র ব্যস্ত কণ্ঠে শুনতে হয়—
সেই ঘুম জাগা অভিমানের ইতিহাস।
মুহীব ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আনমনে ভেসে উঠে,
আমার বাবা মায়ের প্রেমে আমি কেমন ফুল হয়ে জন্মেছিলাম।

ঘাম আর বৃষ্টির এক হয়ে যাওয়া বাবার সেই ধূসর শার্টে,
ঘন কালো দাগ ঢাকা পরতো কাদামাটির স্তরে স্তরে।
আমার বাবার গরীব হওয়ার দুঃখটা টের পাই তখন,
যখন মাসের শেষে মুহীবের অসুখ হয়।
ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশনের সবগুলো ঔষধ,
ফলমূল আর নানান রকম খেলনা কেনার পরেও
একজোড়া বেলিফুল আমি ঠিকই কিনতে পারি। 
নিজেকে কতটা গুছিয়ে নিয়েছি; তার একমাত্র সাক্ষী–
চার বছর আগে নতুন বউয়ের দেওয়া এই চামড়ার মানিব্যাগ।
বাবাদের বুঝি গুছিয়েই চলয়ে হয়;
যেভাবে গুছিয়ে চলে মায়ের রান্নাঘর।

গতবার যখন গ্রামে গিয়েছিলাম; আমার বাবা তখন–
মুহীবকে কোলে নিয়ে ডাক শিখাচ্ছিলেন “দা-দা দা-দা”।
বাবা রোজ সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার সময়,
মুহীবের জন্য কিছু না কিছু নিয়েই আসতেন।
একদিন মা ওর দাদার কাছে নিয়ে যাওয়ার ছলে
মুহীবের আঙুল ধরে হাঁটতে শিখাচ্ছিলো।
আমি তখন সুখের ঘোরে খুব গোপনে
মুহীবের মায়ের চোখে চেয়ে নিঃশব্দে হেঁসে দিলাম।
সেই হাসি দেখলো না কেউ; জানলো না কেউ।

বাবা প্রায়ই শীতের সকালে প্রথম আলোয়,
মুহীবকে নিয়ে যেতো মসজিদের পাশের কবরস্থানে।
আগামী শীতে বাবা নিশ্চয় মুহীবকে
তার পূর্বপুরুষের কবর চেনাতে পারবে।
ততদিনে মুহীব কথা বলতে শিখে যাবে;
ইতিহাস তখন দাদা-নাতীর গল্প হয়ে যাবে।
কিংবা কেমন হবে! – যদি সেখানে,
গড়ে উঠে আরো একটি নতুন কবর?

এইসব ভাবতে ভাবতে চা ফুরিয়ে যায়।
আমি হাঁটতে থাকি; — একটুখানি আগে ঘরে ফিরতে
লোকাল বাস ছেড়ে সিএনজি’র দর কষাকষি করি।
পূর্ণিমার রাতে বেলি ফুলের মালা কিনতে গেলে,
মুহীবের জন্যও একটি কিনতে হয়; নয়তো–
হাসিমুখে ফুল তার মালিক বদলে ফেলে।
এমন একেকটি বেলিফুলের মালা কেনার জন্য,
আমি সারাটা বিকেল অবসাদ নিয়ে অপেক্ষা করতে পারি।
তারপর, তারপর আমার ঘরে ফেরা ক্লান্ত বুকে
লাফিয়ে উঠা ছেলের হাসিমুখ; আর সেই মুখে
উচ্চারিত সেই পুরোনো শব্দ “বাব-বা"—
আমার সকল অবসাদ নিমিষেই হারিয়ে যায়।
নিজেকে তখন বাবার মতো নায়ক মনে হয়।

Friday, May 26, 2023

The Last Poem – II

 আচ্ছা, এমন যদি হইতো,
তোমার আর আমার প্রেম শেষ হয় নাই।
কিন্তু শেষ হইয়া গ্যাছে মহামারী করোনা।
শেষ হইয়া গেছে আমাগো দূরত্ব।
ভাবতে পারো,
কেমন হইতো আমাগো প্রেম?
প্রেমের রাগ-অভিমান?

কেমন হইতো,
যদি শুভরাত্রি চুমোর আগে,
একখান কবিতা শুনাইতাম?
কেমন হইতো যদি,
বৃষ্টি নামলেই দৌড়ায়া যাইতাম
তোমার নতুন ঠিকানায়?

কইতে পারো কি হইতো?
কি হইতো হুট কইরা আমি মইরা গ্যালে?
আমার সাথে জাহান্নামে যাওয়ার লাইগা
ছটফট করতো তোমার মন?
ছটফট করতো একবার জড়ায়া ধরার লাইগা?
শেষ রাইতের তাহাজ্জুদে হাত উঠায়া
কাইন্দা কাইন্দা আমার নাম নিতা?

ভাবতে পারো,
তোমারে যদি নিয়া যাইতাম,
আমার প্রিয় জায়গাগুলায়; আর
তুমি নিয়া যাইতা তোমার প্রিয় জায়গায়।
ভাবতে ভাবতে তুমি কি কইতে পারো,
আমাগো প্রিয় জায়গাগুলা এক হইতো কিনা?
কইতে পারো, আমাগো প্রিয় গানগুলা এক হইতো কিনা? 
কইতে পারো,
ভালোবাসা দিয়া মানুষরে
কতোখানি বদলায় ফালান যায়?
অমন ভালো বাসতে পারো? 

The Last Poem - I

মাঝরাতে চাঁদের আলোয় 

হিমু হয়ে যারে নীলা আঁকি

তারে আমি ভালোবাসি


মনের টানে ঘরে ফিরে

যার সোহাগে শান্তি খুঁজি

তারে আমি ভালোবাসি


গহীন রাতে বইয়ের ভাঁজে

যার চুলের আদর খুঁজি 

তারে আমি ভালোবাসি


মনের ভুলে ভুল করিলে

যার নিশ্বাস বুকে খুঁজি

তারে আমি ভালোবাসি


ঘুমোবোর আগে শেষ পলকে

যারে আমি ভীষণ খুঁজি

তারে আমি ভালোবাসি


ঘুমের পরে শান্ত ভোরে

প্রথম আমি যারে খুঁজি

তারে আমি ভালোবাসি

 

Friday, April 28, 2023

প্যাশন এবং ক্যারিয়ার

আমি একটা বিষয় খেয়াল করলাম, যখন আমি একা থাকি তখন খাবার নিয়ে একদমই উৎসাহ নাই। পোশাক বা অন্যান্য কিছুও কেয়ার করি না। আজকেও রাত নয়টা পর্যন্ত আগারগাঁও আইসিটি ভবনের সামনে থেকে লুঙ্গি পরে ঘুরে আসলাম। ঘরবাড়ি আসবাবের দিকেও আমার উৎসাহ নাই। ঘুমানোর জন্য একটা চৌকি, চাদর আর শীতের দিনে কাথা হলেই হলো। "দ্যা আলকেমিস্ট"-এর সান্তিয়াগোর মতো বইকে বালিশ বানিয়ে ঘুমানোতে আমি অভ্যস্ত। তারপরেও আমার ভালো খেতে হয়, খাই। ভালোভাবে থাকতে হয়, থাকি। ঘরবাড়ি বানাতে হয়, বানাই। এতো কম ডিমান্ড থাকার পরেও আমি বেশি স্যালারীর চাকরীর জন্য জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে দিচ্ছি। কেনো? কারণ আমি চাই, আমার আশেপাশের মানুষ যেনো তাদের ডিমান্ড গুলো পূরণ করতে পারে, আরেকটু ভালো থাকতে পারে। কিন্তু অন্য কোনো মানুষের জন্য কেনো আমি এইসব করবো? কারণ আমি তাদেরকে ভালোবাসি। তাহলে আমি কি আমার ভালোবাসার মানুষগুলোর ডিমান্ড পূরণ করার জন্যই এসেছি? নাহ! এর বাইরেও আমার এবং আমাদের সবার নিজস্ব জীবন থাকে। অনেক জ্ঞানের শূণ্যতা থাকে, যা পূরণ হলে আমরা শান্তি পাই। এইটা হলো প্যাশন। আর চাকরীটা হলো ক্যারিয়ার। কারো যদি প্যাশন আর ক্যারিয়ার দুইটাই একই হয়, তাহলে সে ভাগ্যবান। আর যাদের দুটো আলাদা হয়, তারা অভাগা; বিষয়টা এমনও না। তাদের উচিৎ ক্যারিয়ারের বাইরেও কিছু সময় রাখা, যাতে সে প্রকৃত শান্তিটা পায়। অভাগা তারা, যারা জানে না তাদের প্যাশন কিসে।

ঘোরতত্ত্ব

হে পৃথিবী, তুমি কি আমার মতোই নিঃসঙ্গ?
হে চাঁদ, তুমি কি ঘরের বউয়ের মতোই বেশরম?
হে হাওয়া, তুমি কি পান্তা ভাতের ঝোলের মতোই হতভাগা?
হে আকাশ, তুমি কি পোষাকের মতোই ঘাতক?
হে জমিন, তুমি কি মজলুমের মতোই নির্বাক?
হে মানুষ, তুমি কি প্রেমিকের মতোই স্বার্থপর?
হে হৃদয়, তুমি কি অন্ধকারের মতোই সুন্দর?
হে প্রেম, তুমি কি গরীবের মতোই লোভী?
হে বিচ্ছেদ, তুমি কি নক্ষত্রের ধ্বংসের মতোই বিলীন?
হে মৃত্যু, তুমি কি পাখিদের জবান খুলে যাওয়ার মতোই ভয়ংকর?

Tuesday, April 11, 2023

জীবনতত্ত্ব

যে দুঃখকে আমি সুখ ভেবে প্রতারিত হয়েছি বারংবার,
সেই দুঃখকে ভালোবেসে সুখের করেছি অবহেলা।
যে সুখকে আমি দুঃখ জেনে কষ্ট পেয়েছি রোজ,
সেই সুখের অভিমানে দুঃখ আমার বারোমাস পাশে রয়।

যে পরকে আমি আপন ভেবে, আপনকে করি পর,
সেই পর কেউ আমার নয় কো দাদাই,
সেই পর কেউ আমার নয়।
যে আপনকে আমি পর ভেবে, পরকে করি আপন,
সেই আপনই আমার সব গো দাদাই,
সেই আপনই আমার সব।

যে প্রেমকে আমি ঘর ভেবেছি, সেই ঘর সত্য নয়।
যে প্রেমকে আমি ধ্বংস করেছি, সেই প্রেম মিথ্যে নয়।
ঘরে তবু প্রেম জাগে, আসল কিংবা নকল।
প্রেম বড় সহজ গো দাদাই, তবু কেন এতো কম?

[ এই কবিতাটা এভাবে ইমাজিনেশান করে লিখেছিঃ আমার নাতি-নাতনিদের সাথে সন্ধ্যায় নদীপাড়ে বসে ব্যাক্তিগত জীবনের ফিলোসোফি নিয়ে গল্প করতে করতে কবিতা শুনাচ্ছি আর ব্যাখ্যা করছি। ]

Sunday, April 9, 2023

বিষণ্ণ সুন্দর রাত

যে কবিতা আমি লিখবো না বলে,
কসম কেটেছিলাম অভিমানের।
সেই কবিতা আজ বাতসের তালে হৃদয়ে বাজে।
যে দহনে নিকোটিনের জন্ম হয়ে উঠে স্বার্থক,
সেই দহনে উনুনের ক্ষয় কতটুকু জানো?
যে ধোঁয়া চোখকে পাশ কাটিয়ে নাচে আকাশের পরে,
সেই ধোঁয়ার আর্তনাদ কতটুকু জানো?
যে প্রেম দূরে সরে গেছে বলে দূরত্ব পারেনি মিলাতে,
সেই প্রেম কত কাছে ছিলো বলে,
দূরত্ব হয়ে উঠেছিলো জ্বরের উষ্ণতার মতো আপন?
ওগো শিমুলতুলোর মেয়ে, মনে পড়ে?
মনে পড়ে এইসব অপ্রেমের গল্প?
মনে পড়ে কোনো বৃষ্টিস্নাত রাতের শেষে?
কিংবা, ভয় পেয়ে জেগে উঠা কোনো মাঝরাতে ঘুমের পরে?

Sunday, March 19, 2023

আত্মপরিচয়

আমি পৃথিবীর প্রথম পুরুষের মতো হতাশ।
আমি পৃথিবীর শেষ পুরুষের মতো লোভী।
আমি বকুলের মতো হার মেনে যাওয়া কাপুরুষ।
আমি সূর্যমুখীর মতো যুদ্ধ করে যাওয়া মহাবীর।

আমি জীবনানন্দের সেই প্রেম,
"একা- হরিণীর মতো আমাদের হৃদয় যখন!
জীবনের রোমাঞ্চের শেষ হলে ক্লান্তির মতন
পাণ্ডুর পাতার মতো শিশিরে শিশিরে ইতস্তত
আমরা ঘুমায়ে থাকি !- ছুটি লয়ে চ’লে যায় মন!"
আমি নজরুলের সেই বিদ্রোহী,
"করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা।
আমি দুর্দ্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দ্দম্ হ্যায়্ হর্দ্দম ভরপুর মদ।
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!!
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণি!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!"

আমি ফ্রেডির মতো চিৎকার করে গেয়ে উঠি,
"Mama, I don't want to die,
I sometimes wish I'd never been born at all."
আমি পিংক ফ্লয়েডের সুরে কেঁদে উঠি,
"The child is grown, the dream is gone
I have become comfortably numb"
আমি জন লেননের মতো শান্তি চেয়ে বলি,
"Imagine there's no countries, it isn't hard to do
Nothing to kill or die for, and no religion too
Imagine all the people living life in peace"
আমি লালনের মতো গলা ছেড়ে গাই,
"কে বলে মানুষ মরে,
ও মানুষ মরলে পরে বিচার হবে কার গো?"

আমি নবজাতকের মতো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি,
আমি মৃত্যুর শিয়রে বসে হাহাকারে হয়ে যাই নির্বাক।
আমি ঝড়ের মতো আতঙ্ক এনে দিই নিজের বুকে,
আমি মৃদু বৃষ্টির মতো সুখের দমকা হাওয়া ছড়াই।
আমি যুদ্ধের ময়দানে জলন্ত বারুদের মতো হিংস্র,
আমি ফজরের আজানে জেগে উঠা এক ভীরু।

Friday, March 17, 2023

যেভাবে বেঁচে থাকি আমরা

আমাদের ভোর হয়, সূর্য ওঠে
আমরা জেগে উঠি, সতেজ হই।
চোখে জল দিই, স্নান করি।
আমরা বেরিয়ে পরি, দূরে যাই—
ইস্কুল, কলেজ, খেত, খামার, অফিস
দূরে, আরোও দূরে—
পৃথিবীর অন্ধকারে মিশে যাই সূর্যের যৌবনে।

আমরা ক্লান্ত হই, উদাস হই
গোধুলি রঙের অবসাদে শান্ত থাকি।
আমরা ব্যস্ত হই, ঘরে ফিরি
জীবনের সব ভুল হিসেবের ফাঁকে একটু হাসি।
আমরা ভালোবাসি, কথা বলি
রাতের অন্ধকারে সুখের আলো খুঁজি।

আমরা মূলত হতাশ, আমরা ব্যর্থ
নিজেদের বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বাণিজ্য নেই।
তারপর, নিজেদের বিক্রি করা টাকায় বাজার করি, তিন বেলা ভাত খাই।
কিংবা, মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। 

Thursday, March 9, 2023

দুঃখের হাস্যধ্বনি

এই ধুলো ধুলো শহর, ধুলোর মতো হৃদয়ে জমে থাকা সব ক্ষত, শহুরে মানুষ, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা প্রাক্তন, জীবনের অবসাদে থমকে যাওয়া আমাদের সুখ, অবাক করে দিয়ে হেসে ওঠা আমাদের দুঃখ, কর্কশ হর্ণ বাজিয়ে যাওয়া ট্রাফিক জ্যাম, ব্যবহারযোগ্যবিহীন ফুটপাতে ছুটে চলা মানুষের ভীড়, সিগারেট ফুকতে থাকা বেকারের জীবন, হতাশার নদীতে ডুবে যাওয়া একটা মস্তিষ্ক, ক্ষুদার্ত পেট নিয়ে হেঁটে যাওয়া শূন্য মানিব্যাগ এবং পৃথিবীর সকল বিরহ আমাকে ভালোবেসেছিলো বহুবছর আগের কোনো এক চৈত্রের মধ্যদুপুরে। যেই দুপুরে আমি নিঃসঙ্গ কুকুরের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম কোন উদাস পাখির শুষ্ক চোখের কালোতে। 

বৈশাখের ঝড়ে কুড়িয়ে পাওয়া আমের হিসাব কষার মত জীবনের যে কয়টি বছর শিমুল ফুলের মতো ঝরে গেলো, অবসাদমাখা ক্লান্তিকর হতাশা ছাড়া কিবা উপহার দিয়েছি তাকে? শৈশবের শিলাবৃষ্টিতে কুড়িয়ে পাওয়া বরফের মতো কিছু সুখ জমিয়েছিলাম বুকপকেটে। দু’দণ্ড স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে টের পাই সুখের বরফ গলে ঝরছে আত্মঘৃণার জলপ্রপাত।

যে সুখের সাথে বনিবনা হয়নি আমার বাবার, সেই সুখকে খুন করেছি নিজ হাতে। যে শান্তির সাথে দেখা হয়নি আমার মায়ের, সেই শান্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছি বহুবার। যে দুঃখকে খুব আদরে পুষেছিলো আমার বাবা মা, সেই দুঃখ সয়ং আমি নিজেই। আয়নায় তাকালে সেই দুঃখ ভেসে উঠে বলে ভেঙে ফেলেছি সেই অন্ধকারের আয়না। আত্মার বেচাকেনা হয় না বলে আজও বাঁচিয়ে রেখেছি বাবা মার দুঃখকে। নিঃসন্দেহে আমি একজন সার্থক প্রতারক। যে কিনা নিজের মায়ের স্বপ্ন বিক্রি করে দিয়েছে কোনো এক তাসের ঘরে।

অন্ধের অন্ধকার

বিষাদ দিনযাপনের ইতিহাস থাকুক শহর জুড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন দেখতে পাই, নষ্ট হওয়া খাবারের গন্ধে কতটা উন্মাদ দাঁড় কাক। ঘৃণাভরা কোলাহল ভাঙলেই য...