মধ্যরাত। আধার আকাশে অজস্র তারা। শব্দহীন আকাশ, কোলাহলবিহীন চারিপাশ। নিয়ন আলোর ল্যাম্পপোস্ট, হিলিয়াম আলোয় রাতের শহরে আলোকিত জানালার মানবহীনতার আর্তনাদ ছেয়ে গেছে যান্ত্রিক শহর, যাপিত জীবন। কংক্রিটের দেয়ালে আলো আধারের এই আর্তনাদ কারো চোখের পিউপিল ভেদ করে মগজে ভাসায় সূর্যের এলগরিদম ; হাহাকার বুকে কান্না আসে দীর্ঘশ্বাসের ।
স্থির চোখে খোলা ছাদে দোলনায় দোল খেয়ে আমি শাহীদ আকাশের তারা দেখি, তারাদের সাথে কথা বলি, আত্নকথোপকথন ! মাঝরাতে এক শহর আধারের তন্দ্রা নেমে আসে আমার চোখে ; অক্লান্ত শরীর ছুঁয়ে যায় এক মেঘ শীতলতা। কনজাংটিভা আবৃত হয় চোখের পাতায়। দূরদৃষ্টি থেমে যায়। আমার চোখ দেখে আমাকে। নিথর শরীর দোলতে থাকে খোলা আকাশের নিচে।
আমার অবচেতন মনকে ভর করে আমি উপরে উঠছি। দেখছি, খোলা ছাদের এককোণে পাতা দোলনাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন শাহীদ দোলছে। যেনো এই শহরের সুখ তার খাদেম। সকল সুখেরা তার চোখে ভর করে আছে, জেগে আছে শিয়রে । রাতের নিরব আধারের বাতাস তার ঘুমন্ত শহরের ঘড়ির কাটা থামিয়ে দিয়েছে, ভুলাচ্ছে তার জগত।
আমি আরো উপরে উঠছি। দেখছি পুরো একটা শহর। উঁচুনিচু দালান , রাজপথে যানজট, আলোর কোলাহল, যান্ত্রিক মানব । তারার মত জেগে আছে শহরের আলো ; যেনো শহরজুড়ে একটুখানি লোডশেডিং এর আবদার। ইটের পাহাড়ে আলোকিত জানালার ভেতরের চিড়িয়া নির্ঘুম। সাদাকালো চোখে মিথ্যের রঙ। গলা থেমে গেছে আজ প্রযুক্তির আশীর্বাদে ; হলুদ রঙা মুখোশ সাজাচ্ছে মিথ্যে অনুভূতি, কিবোর্ডে জন্ম নিচ্ছে নাগরিক হাসি। মনে জমানো আছে আগুনের খনি, আবেগ পোড়াচ্ছে। উন্মাদী ভালবাসা হারিয়ে যাচ্ছে । এই শহরে প্রেম আছে, ভালবাসা নেই । হ্যাঁ প্রেম! শরীরকেন্দ্রিক প্রেম। ইভান ভাইয়ের গানের কথায়, "নেশা লাগে ঠোটে, নিশানা চোখে" ।
আমি আরো উপরে উঠতে উঠতে একদম পৃথিবীর বাইরে চলে এসেছি। আমি মহাশূন্য থেকে পৃথিবী দেখছি। দেখছি নাগরিক মানুষের যান্ত্রিক সংসার। সূর্য উঠে সূর্য ডুবে, ঘড়ির কাটা ১২-৬-১২ খেলা করে, আলো আঁধারের রঙ জ্বলে নিভে। এই পৃথিবীতে আবেগের চেয়ে অর্থের দাম বেশী ; ভালবাসার চেয়ে বিলাসিতার দাম বেশী।
আমি এতো উঁচু থেকেও স্পষ্ট শুনতে পারছি পৃথিবীর আর্তনাদ। চিৎকার করে আমি পৃথিবীকে বলছি , " পৃথিবী, কেমন আছো ? কেমন আছে তোমার মানব চিড়িয়ারা? "
No comments:
Post a Comment