বাইশে বৈশাখ। মাত্রই বিকেলের শুরু। গাঢ় অন্ধকার। কালো মেঘেরা নিষ্প্রাণহীনতায় উড়ছে। একদল পাখি যেনো বাসাতের বেগে উড়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। ঘুড়ি প্রিয় কিশোরদলও নাটাই হাতে দৌড়ায়। ছোট ছোট উলঙ্গ শিশুরাও হা করা বড় মুখ নিয়ে ছোট চোখে তাকিয়ে থাকে হাসিবিহীন ছেলেমানুষি আনন্দে। বেগ বাড়ছে ঘূর্ণিবাতাসের। মায়ের বকুনি শোনার আগে বাড়ি ফেরার তাড়া শিশুকিশোরের। একপাল গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার তাড়া মধ্যবয়সী লোকটির। তের বছর বয়সী ছেলেটাও ছাগলের খুঁজে অক্লান্ত।
নদীর ঢেউ যেনো ঝড়ের ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। ঢেউয়ে ঢেউয়ে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে উঠছে জলকণা। প্রবল বাতাসে নদীর ওপারের কলাগাছের ঝোপটাও বাতাসের তালে নৃত্যরত। বাড়ীর পাশে সারি সারি সুপারি গাছ ঝড়ো বাতাসে বিদ্রোহী পতাকার মত উড়ছে। বাঁশবাগানের এলোমেলো ছোটাছুটিতে কিছু বাঁশপাতা বাড়ীর উপর দিয়ে এসে বাতাসে উড়ছে। সাদাকালো আকাশ, ঘোলাটে দূরদৃষ্টি, অন্ধকার নেমে এসেছে আকাশে, বৃষ্টি নেই, ধূলিময় বাতাস, এই বুঝি ঝড় এলো।
ঝড়োয়া বাতাসে ধূলি ধূসরিত রাস্তায় শক্তি বেড়েছে বৃদ্ধার হাতের লাঠির। বাড়ির সামনে বাচ্চাদের ছোটাছুটির সাথে তাল মেলাতে বাদ দেয়নি তিনটি বাছুর আর ছাগলের চার বাচ্চা। বাড়ীর মেঝো বউটির চোখে ঠোটে দেড় বছরের বাচ্চাকে আগলে রাখবার আনন্দ।
অদূরে মফস্বল। মেয়েদের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। সাদা পাজামা আর সাদা স্কার্ফ এর মাঝে সবুজ জামা পরা স্কুল বালিকারা বিচ্ছিন্নভাবে দলবেঁধে স্বগণ্ডগোলে হেঁটে যায়। তাহাদের হাসিমুখে চিকন গলার স্বর প্রবল বাতাসকে অগ্রাহ্য করে। দলবাঁধা কিশোরীর আচমকা হাসির শব্দ ঝড়োয়া বাতাসকে হার মানায়, প্রকৃতিকে উন্মাদ করে তুলে । তবুও তাহাদের পায়ে বাড়ী ফেরার তাড়া, দ্রুততা । গোলাপি ঠোটের কম্পনে সাদা দাঁত আর জিহ্বার লাল পৃষ্ট সাদাকালো আকাশের পূর্ণতা। হাসিমাখা ফোলা গাল প্রত্যুত্তর দিয়ে যায় বান্ধবীর হাসির। তবুও কেয়ার হাসিমুখে ভয়ার্ত চোখে সন্ধানী দৃষ্টি। অপেক্ষারত হৃদয় জানে নিখোঁজ সংবাদ। কি যেনো নেই, কে যেনো নেই! সাজিদ কই?
No comments:
Post a Comment