Sunday, December 25, 2022

হিমুকরণ - ০১

অজ্ঞাতনামা একটা ছেলে ঢাকায় প্রবেশ করে। সে নিজেকে শুধু আড়াল করতে চায়। তাই নিজের মাঝে একটা অন্য মানুষ তৈরি করবে সে। অন্য মানুষ, অন্য নাম, অন্য অঙ্গভঙ্গি, অন্য সাজ, অন্য সবকিছু। আপাতত ঢাকায় একটা মেসে উঠে কোন এক নাম দিয়ে চালিয়ে দিছে। তারপর মেসে, মেসের-বাইরে মানুষজন পরিচিত হয়। এক সিগারেট দূরত্বে এক মেসে একজন বন্ধু ছিল উচ্চতর গাজাঁখুর, দিনে পাঁচ বেলা গাঁজা খাওয়া লোক।

একদিন অজ্ঞাতনামা যুবকটি উচ্চতর গাঁজাখুরের থেকে দুই টান উচ্চতর গাঁজা খেয়ে নিজের মেসে ফিরতেছিলো। মেসের সামনে এসে মনে হলো রাস্তায় হাঁটছে প্রচণ্ড ভালো লাগছে। পিছু ফিরে দোকান থেকে একটা চকলেট কিনে হাঁটতে লাগলো। চকলেট শেষ হলে পরপর দুই প্যাকেট চানাচুর খেতে খেতে আরও হাঁটতে লাগলো। এভাবে ঘোরের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে মেসের গেইট অফ করে দেওয়ার সময় হয়ে গেলো। সে আরও হাঁটতে লাগলো। অনেক হেঁটে মেসে ফিরে মেস মালিককে ডেকে গেইট খুলে বাসায় ডুকে। হেঁটে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে তার মনে হল হিমালয়ের মতো পর্বত বেয়ে উঠছে। সে ভাবছে এই হিমালয়টা পর্বতটাকে কেটে ছোটো করে ফেলা যায় কিনা। হঠাৎ মাথায় প্রশ্ন আসলো, হিমালয় কেটে ছোটো করে ফেললে কি হবে? সে নিজেই বলে উঠলো "হিমু"। এবং পরক্ষণেই খেয়াল করলো, হিমালয় থেকে হিমু; নিজেকে অন্য করে ফেলার ব্যাপার। ভালো লেগে গেলো। এবং নিজের অজ্ঞাতনামা ক্যারেক্টারকে একটা নাম দিলো, "হিমালয় হিমু"। যেই নামের ভেতর আছে নিজেকে বদলিয়ে ফেলার আহ্বান।

গাঁজা খেয়ে রাতে হাঁটার বিষয়টা হিমালয় সাহেবের চরম ভালো লেগে গেলো। ঘোরের মাঝে সবকিছু কেমন যেন অন্যরকম লাগে। তাই প্রায়ই গাঁজা খেয়ে মেসে ফিরতে দেরি করে। এজন্য মেস মালিক বা ম্যানেজাররা অনেক ঝামেলা করে। এবং কয়েক মাস পরপর মেস বদলাতে হয়। 

(আপাতত আর টাইপ করতে ইচ্ছা করতেছে না। হিমু আমারও খুব প্রিয় ক্যারেক্টার। কিন্তু একটা সুস্থ মানুষ কিভাবে এমন আজব কাজকাম করতে পারে এটা ভেবে ভেবে এতটুকু কল্পনা করলাম। "গাঁজা খাওয়া ছাড়া একটা মানুষ এমন অদ্ভুত হতে পারে", এই কথাটা আমার লজিককে হার মানাতে পারছে না। তাই আমার লজিকের দিকে মনোযোগ দিয়ে দৃশ্য আঁকল্যাম জাস্ট।)

Thursday, September 29, 2022

অথচ আমি মানুষ - দুই

আমি যদি মানুষ না হইতাম,
চৈত্রের দুপুরে উইড়া বেড়ানো শিমুলতুলার মতো
ভরদুপুরে তোমার বাড়ি যাইতাম।
অথচ আমি মানুষ,
তোমারে না পাওয়া দুপুরগুলাতে তোমার কাছে উইড়া যাইতে পারি না।

আমি যদি মানুষ না হইতাম,
চন্দ্রমল্লিকা ফুলের মতো ফুইটা থাকতাম তোমার বারান্দায়,
শেষ বিকেলের নিরবতায় আলতো করে ছুঁয়ে দিতে আমায়।
অথচ আমি মানুষ,
তোমার বারান্দায় আমার নামে বরাদ্দ কোনো জায়গা নাই।

আমি যদি মানুষ না হইতাম,
শরতের আকাশে সাদা সাদা মেঘ হয়ে কাশফুল এঁকে দিতাম,
তুমি আমাকে না পেয়ে ছুটে যেতে কাশফুলেদের কাছে।
"আমি নেই" এই একটা অনুভূতি ছুঁয়ে দিতো তোমায়।
অথচ আমি মানুষ,
চাইলেও তোমার হেঁটে চলা রাস্তার পাশে ঘাস হইতে পারি না।

Sunday, September 25, 2022

পরিত্যাক্ত মানব

ঘোরের ভেতর যে বাতাসের সংঘর্ষে শীতল হয়ে উঠেছিলাম,
সেই শীতলতার লোভে বাতাসের পিছু ছুটতে ছুটতে
নিজেকে আবিষ্কার করি নিজের থেকে অনেক দূরে।
বিভ্রান্তিকর এই অনিশ্চিত পথ থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়ে
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি মাতাল শহরের কোনো পরিত্যাক্ত মদের বারে।
হারিয়ে যাওয়া নিজের অস্তিত্বের অভিশাপে—
এক বোতল হুইস্কি গোগ্রাসে খেয়ে ফেললো আমার শান্তিপূর্ণ হৃদয়।
ক্লান্ত শরীরে ভর করে আমার আহত আত্মা প্রবেশ করে প্রাণহীন শহরে।
যে শহরের পথ জানেনা তার শেষ ঠিকানা। সেই শহরে,
এক টুকরো শীতল বাতাসের খুঁজে আমি বিক্রি করলাম নিজের আত্মাকে।
 
এইসব শহুরে ভ্রান্ত অভিযোগ দূর হলে,
আমার শরীর ছুটে যাবে তোমার কাছে।
অবসাদমাখা আমার শরীর নতজানু হয়ে,
চেয়ে থাকবে তোমার শীতল চোখে।
তখন, তখন তোমার নরম হাতের স্পর্শে,
আমার শরীরে এনে দিও এক টুকরো হৃদয়।

Sunday, September 11, 2022

অসুখ হইলে আমার ইচ্ছা করে

অসুখ হইলে আমার ইচ্ছা করে, দরজা জানালা বন্ধ কইরা ঘরটারে আন্ধার বানাইয়া কাথা গায়ে দিয়া শুইয়া থাকি। শুইয়া শুইয়া জ্বরের সাথে মোলাকাত করতে করতে ঘোরের মধ্যে আমি মায়ের কোলটারে খুঁজতে থাকি। চিৎ হইয়া শুইয়া শুইয়া মনে করতে থাকি-, জ্বর হইলে যখন আমার  মায় মাথায় পানি ঢালতো; তখন একফোটা পানি হুট কইরা চোখের মধ্যে ডুইকা পরার অনুভূতিটা। ঘোরের মধ্যে আমি টের পাই আমার শরীরের লোমগুলো পরাজিত সৈনিকের মতো কাবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমি কাথাটারে আরো একটু আপন কইরা নিয়া গুটিশুটি হইয়া শুইয়া থাকি।

অসুখ হইলে আমার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে।
আমি ছুঁইটা যাই আমার কলমের কাছে,
কলম আমারে প্রত্যাখ্যান করে।
অসুখ হইলে আমার ছুঁইটা যাইতে ইচ্ছা করে,
ঘাসফুলে শিশির জইমা থাকা পুরানা রাস্তায়;
এইসব নাগরিক জীবন আমারে গলা পেঁচাইয়া ধরে।
অসুখ হইলে আমার ইচ্ছা করে,
ইচ্ছা করে আমি পাখি হইয়া যাই;
ছোটবেলায় নিজে হাতে মাইরা ফালানো
টুনটুনির বাচ্চার অভিশাপে আমার আর পাখি হওয়া হইলো না।

অসুখ হইলে আমার অনেক অনেক অনেক কিছু ইচ্ছা করে। এইসব এইসব ইচ্ছাগুলো যখন আমারে ঘাড় ধাক্কা দিয়া দূরে সরাইয়া দেয়। তখন আমি ধরতে চাইলাম একজোড়া শীতল হাত। যেই হাতের শীতলতায় আমার জ্বরের শরীরের সব উষ্ণতা মেঘ হইয়া উইড়া যাইবো। অথচ, অথচ সেই হাত দুইখানও আমার কখনো ধরা হইলো না।

Thursday, August 25, 2022

When a blind man cries

When a blind man cries,
Lord, only Lord knows
How much pain there is.

When a lost soul dies,
No one wants to know
Why someone is dying.

When a broken heart imagine,
He knows, only he knows
Nothing became the truth again.

Ahh life, only life, a struggle life knows
How many ways there are to be depressed.
Ohh love, only love, true love knows
How to burn life and soul carefully.

Thursday, July 7, 2022

Comfortably Numb - Pink Floyd

Comfortably Numb - Pink Floyd

হ্যালো—, হ্যালো
কেউ আছো এইহানে?
শুনতাছো? একটু খালি আওয়াজ দেও।
কেউ আছো ঘরে?
একটু বাইর হইয়া আসো,
শুনলাম তুমি মন খারাপ কইরা আছো।
আইচ্ছা, আমি তোমার কষ্ট মুইছা দিমু।
তোমারে আগের মত সহজ কইরা দিমু।
বসো,
তোমার দুঃখ বুঝার লাইগা,
আগে কিছু কথা কইয়া লও,,
তুমি কি দেখাইতে পারবা,
কোনখানে দুঃখটা তোমার?

মুইছা যাওয়ার মত কোনো দুঃখ না এইটা,
দূরের জাহাজ থাইকা উইড়া যাওয়ার ধোয়ার মত
আপনি শুধু বাতাসে ভাইসা আইছেন।
আপনার ঠোঁট ঠিকই নড়তাছে,
কিন্তু আমি কিছু শুনতাছি না।
আমি যখন ছোট ছিলাম, আমার একডা অসুখ ছিলো,
আমার হাত দুইডা ছিলো, বেলুনের মতো নরম।
সেই মনের অসুখটা এখনও আমার মাঝেমধ্যেই হয়।
আমি না পারমু আপনারে বুঝাইতে,
না পারবেন আপনি আমারে বুঝতে।
দেইখা মনে হইলেও, আমি আসলে এতো সুখী না।
আমি, আমি শুধু এইটারে অভ্যাস বানাইয়া ফালাইছি।

আচ্ছা—,
যদি শুধু হালকা হওয়ার লাইগে একটুখানি কইতা,
একটু খালি উসফাস লাগতো। কিন্তু,
একটুখানি চেষ্টা কইরা দেহো।
আমি কইতাছি তুমি সুখী হবা।
তোমারে দৃশ্যের মতো রাস্তা দেখায়া দিবো,
বাইর হইয়া আহো, সময় তো চইলাই যায়।

মুইছা যাওয়ার মত কোনো দুঃখ না এইটা,
দূরের জাহাজ থাইকা উইড়া যাওয়ার ধোয়ার মত
আপনি শুধু বাতাসে ভাইসা আইছেন।
আপনার ঠোঁট ঠিকই নড়তাছে,
কিন্তু আমি কিছু শুনতাছি না।
আমি যখন ছোট ছিলাম,
একটা অবসাদবিহীন নির্মল অনুভূতি ছিলো।
ভাবনার আড়ালে মাঝেমধ্যেই চোক্ষে ভাসে।
চোখ খুইলা দেখতে গেলেই হারায়া যায়।
আমি আর হাত বাড়াইয়া ধরতে পারি না।
ছোট্ট বাচ্চাডা বড় হইয়া গেছে,
তার স্বপ্নটাও হারায়া গেছে।
আমি, আমি শুধু এইটারে অভ্যাস বানাইয়া ফালাইছি।

Sunday, June 5, 2022

অথচ আমি মানুষ - এক

আমি যদি ঘাস হতাম,
সকালের শিশিরে নিজেকে ভিজিয়ে তৃষ্ণা মিটাতাম;
কিংবা, নরম বাতাসে চোখ মেলে আকাশ দেখতাম।

আমি যদি প্রজাপতি হতাম,
গাছের পাতার মতো ডানা ঝাপটে উড়ে যেতাম বিলের ধারে;
কিংবা, মিশে যেতাম এক ঝাঁক ফড়িংয়ের মাঝে।

আমি যদি জোনাকপোকা হতাম,
সন্ধ্যের পরে খেলা করতাম শিশুদের সাথে;
কিংবা, নদীর উপর নাচতে নাচতে প্রতিবিম্ব দেখতাম নিজের।

আমি যদি দুঃখ হতাম,
চলে যেতাম বহুদূরে, যতদূর গেলে অভিকর্ষ পারবে না ফিরাতে;
কিংবা, ঝাপ দিতাম আগুনে; আগুনে কি দুঃখ পুড়ে?

আমি যদি সুখ হতাম,
ছড়িয়ে যেতাম পৃথিবীর সকল হৃদয়ে;
কিংবা, মিশে যেতাম বৃষ্টির সাথে।

Friday, May 27, 2022

আমি যেইখানে জন্মাইছিলাম

 আমি যেইখানে জন্মাইছিলাম, সেইখানে ভোর হইলে মোরগ ডাকতো। গাছের ডালে দল বাইন্ধা পাখিরা কিচিরমিচির করতো। উঠোন ঝাড়ু দেওয়ার আগে সেইখানে আমার পায়ের ছাপ পরতো। মাঠের ঘাসে জইমা থাকা শিশিরে আমার পা দুইখান গোসল করতো। দুই হাত দিয়া তুইলা নেওয়া শিশির দিয়া মুখ ধুইলে আমার পরাণ জুড়াইতো। বকুলতলায় তাজা বকুলের ঘ্রাণ পাওয়া যাইতো। ঘরের দেয়ালে সেই বকুল মালা হইয়া ঝুইলা থাকতো। শীতের দিনে ভাতভাজি আর গরমের দিনের পান্তাভাত আমারে তৃপ্তি দিতো। আমার মায় চুলায় ভাত উঠানোর পর, উঠোনের পাশের আম গাছটাতে ইষ্টিকুটুম গান গাইতো।

আমি যেইখানে জন্মাইছিলাম, সেইখানে লোডশেডিং ছিলো। ভরদুপুরে পুকুরপাড়ে দক্ষিণা বাতাস আইতো। ফ্রিজ না থাকলেও, নানানরকম গাছের টাটকা ফল ছিলো। দল বাইন্ধা ছুটাছুটি করার মত পোলাইপান ছিলো। লাফালাফি করার মতো নদী ছিলো, পুকুর ছিলো।

আমি যেইখানে জন্মাইছিলাম, সেইখানে বিকেল হইলে দল বাইন্ধা মাঠে খেলা হইতো। কানামাছি, গোল্লাছুট, হাডুডু, জুতাচুর, চোর-পুলিশ থেইকা শুরু কইরা ক্রিকেট, ফুটবল, লুডু; নানান রকম খেলা। শিশু-কিশোরের শরীরে বিকেলের ধুলো জমতো, মায়ের বকুনি শুনতো, মাইর খাইতো। শেষমেশ মাগরিবের আজানে ঘরে ফিরতো। হারিকেন জ্বালায়া পড়তে বসতো।

আমি যেইখানে জন্মাইছিলাম, সেইখানে দিনের বেলায় ফড়িং উড়তো। আর রাইতে জোনাক পোকার আলো জ্বলতো। সেই আলো মশারীর ভিতর পোষ মানতো। রাতের অন্ধকারে গাছের শীতল বাতাস বইতো। সেই বাতাসে ছোট বড় সবাই গল্প করতো। হাত পাখায় নানান রকম দৃশ্য ছিলো। সেই দৃশ্য ধীরে ধীরে দুলতো। ঘুমের সময় টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ ছিলো।

অথচ আমরা সভ্যতা আর আধুনিকতার লোভে পইরা আমাদের জন্মের স্থান বেইচা দিছি একদল কষাইয়ের কাছে। কষাইয়েরা হাজার বোল্ডের ইলেকট্রিসিটি দিয়া আমার ছেলেবেলার জোনাকপোকাদের মাইরা ফালাইছে। আমাদের হাত থেইকা কাইড়া নিছে হাতপাখা। একটা স্মার্টফোন দিয়া জবাই করছে আমাদের ছেলেবেলা। "পড়ালেখা" নামের হাতুড়ি দিয়া পিষাইয়া ফেলছে আমাদের ছেলেমানুষী আত্মা। এইসবের পর, আমি যেইখানে জন্মাইছিলাম, সেইখানে কেউ কোনো শিশুরে জন্ম দিতে পারবো?

কৃত্রিম মৃত্যু

পৃথিবীতে জন্মানোর দোষে,
যাবত জীবন কারাদণ্ড নিয়া পইরা আছি সংসারে।
মুক্তির জন্য প্রয়োজন মৃত্যু। কিংবা,
সংসার থাইকা আমৃত্যু পালায়া থাকা।

সংসারে গেলো বাইশটা বছর।
শিকড়ও তাই কম ছড়ায় নাই,
উপড়ায়া তুলতেও কলিজায় লাগে।
লাগে লাগুক, মৃত্যুতেও তো লাগে।

সব কিছু ছাইড়া ছুইড়া যাইবার আগে
কদম পাতায় ছাড়পত্র লিখলাম, "কৃত্রিম মৃত্যু"।
সংসারের মায়া শালার পৃথিবীর সমান;
তাইতো চিড়িয়া, সংসার কারাগারে যাবত জীবন ভোগে।

সংসার ছাড়লাম আষ্ট দিন হইলো,
ছিলাম বন্ধুদের ঠিকানায়, ঐটাও ছাড়লাম।
এখন আমি পরিপূর্ণ একা, নিঃসঙ্গ -উলঙ্গ গাছের মতো।
গাছের শরীরেও কি বীজের মায়া জাইগা থাকে?

সারাদিন পার্কে ঘুরলাম, পুরানা সব দৃশ্য দেখলাম।
পুরানা সব দৃশ্যের নতুন অর্থ খুঁইজা পাইলাম।
হকারের পণ্য আর শিশুদের ফুল বিক্রি এইবার
বেঞ্চে পইরা থাকা প্রেমের চেয়ে অর্থপূর্ণ লাগলো।

জীবনরে চাষাবাদ না কইরা, চাষাবাদ করি প্রেম।
প্রেম খুঁজি প্রেমিকার চোখে-ঠোঁটে-চূম্মনে,
প্রেম খুঁজি গোলাপের রঙে, কিংবা প্রেমিকের ঘামে।
অথচ প্রেম পইরা থাকে পৃথিবীর সমগ্র বিচ্ছেদে।

বেঞ্চে শুইয়া পাতাদের দুলনিতে আকাশ দেইখা ভাবি,
সংসারী না হইলে, কর্ম-হতাশার গল্প তৈরি হয় না।
বাঁইচা থাকার লাইগা, শুধু পৃথিবীটাই সংসার;
সুখে থাকার লাইগা, দুই বেলা ভাত জুটানোই কর্ম।

তারপর সন্ধ্যা নামে, ল্যাম্পপোস্টে প্রাণ আসে।
তখন পুলিশ ডাইকা কয়, "চইলা যান ভাই"।
কই যাইবো! আমার তো কোনো ঠিকানা নাই।
ঠিকানা বানাইলেই সংসার হইয়া যায়। 

Sunday, May 22, 2022

প্রত্যাবর্তন

 আমার পিছনে বিশাল বড় বালুচর। বালুচরের পরে গহীন অরণ্য। বড় বড় সবুজ গাছ ছাড়া আর কিচ্ছু দেখা যায় না। শু শু কইরা বাতাসের সাথে উইড়া আসে নানান রকম পাখির আওয়াজ। বাতাসের বেগে মাঝেমধ্যে সাদা বালুগুলা ছুটাছুটি করে।

আমার সামনে চিৎ হইয়া পইরা আছে সতেরো বছর বয়সী কোন সুদর্শনা তরুণীর মতো সুন্দর এক নদী। নয়া যৌবনের মতো নিরব ঢেউ নদীর সারা শরীরে বইয়া যাইতেছে। তার উপ্রে দিয়া ভাইসা যাইতেছে সবুজ কচুরিপানা; যেমন ভাইসা থাকে তরুণীর ঠোঁটের কোণে একটা তিল। বিশাল প্রস্থ নিয়া পইরা থাকা এই নদীর ঐপাশে ইয়া বড় খোলা মাঠ। যেন মাঠের পরে আসমান-জমিনের মিলন ছাড়া আর কিচ্ছু নাই।

আমি নদীতে পা চুবাইয়া বালুর উপ্রে বইসা আছি। পা দুইটা নাড়াইয়া পানির মধ্যে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলতেছি। ছোট ছোট ঢেউ আইসা আমার হাঁটু পর্যন্ত ভিজাইয়া যায়। আমি উদাসীন চোক্ষে আসমানে তাকাই, মাথা নামাইয়া নদীরে দেখি, চোখ দুইটা ছাইড়া দিয়া জমিনের শেষ সীমানা খুঁজি। হুট কইরা নদীতে ঠোঁট লাগাইয়া মাছ ধইরা নিয়া যাওয়া মাছরাঙার রঙ দেখি। পাখনা দুইটা মেইলা দিয়া উইড়া বেড়ানো চিল দেখি।

বালুচরের পিছনে যে গহীন অরণ্য, তার ঐপাশে নাগরিক জীবন। উন্নয়নশীল কোন দেশের মফস্বল নয়; টেমস নদীর পাশে বাইড়া উঠা লন্ডনের মতো কোন উচ্চবিলাসী শহর। রাস্তায় ট্রাফিক নাই, ট্রাফিকের ভিড়ে ফুল বিক্রি করা শিশুরা নাই, ফুটপাতে হকার বা মানুষের কোলাহল নাই। শুধু আছে বড় বড় দালান আর সারি সারি ল্যাম্পপোস্ট। এইরকম একটা দালানের মধ্যে আছে "taste your soul" নামের এক বিলাসী মদের বার।

গোধূলীর আলোয় আমি বালুচর ধরে হাঁটতে হাঁটতে অরণ্য ছাইড়া প্রবেশ করি সভ্যতার শহরে। বোহেমিয়ান পায়ে হাঁইটা হাঁইটা আমি পৌঁছে যাই সেই মদের বারে।

পুরো বার জুড়ে নানান রঙের বাতি। প্রতিটা টেবিলে রাখা আছে এস্ট্রে আর লাইটার। নিচু ভলিউমে বাজছে ক্লাসিক্যাল মিউজিক। মিউজিকের ব্যাকগ্রাউন্ডে মানুষের কথোপকথন। দেইখা মনে হইতেছে না এখানে একদল মাতাল নেষায় বোধ হইয়া আছে।

রোবটের মতো এক বারম্যান আইসা চকচকে গ্লাস, বরফ আর হুইস্কি রাইখা গেলো আমার টেবিলে। গ্লাসের ভিতর হুইস্কি ঢাইলা, দুই টুকরা বরফ ছাইড়া দিয়া আমি পেগ বানাইলাম। এক পেগ, দুই পেগ করতে করতে যখন আমি পুরো বোতল শেষ করলাম। তখন আমার মনে পড়লো, এই বারের নাম “taste your soul”। আমি তখন নিজেকে জানার জন্য বের হইয়া পড়লাম শহরের রাজপথে।

নিজের আত্মার সাথে কথা কইয়া আমি জানতে পারলাম, সে আসলে শহুরে জীবন চায় না। আমি তখন বেরিয়ে পড়লাম আমার পুরানা ঠিকানার খুঁজে। গহীন অরণ্যের পথ ধরে তরুণীর মতো চিরযৌবনা নদীর তীরে।

ফেরার পথে অরণ্যের গাছেরা আমারে জিজ্ঞেস করে, গাছের পাখিরা আমারে জিজ্ঞেস করে, বালুর উপর বইয়া যাওয়া বাতাস আমারে জিজ্ঞেস করে, নদীপাড় ধরে ছুটাছুটি করা মাছরাঙা আমারে জিজ্ঞেস করে, আমারে শান্তি দেওয়া নদী আমাকে জিজ্ঞেস করে- “কিসের লোভে কই গেছিলা? কিসের অভাবে আবার পালাইয়া আইলা?” আমি শুধু নির্বাক চোখে সব দেখতে থাকলাম। এই মুহুর্তে আমি নিজের আত্মা স্পর্শ করলাম।

Tuesday, May 10, 2022

আবার যদি পৃথিবীতে ফিরা আইতাম

এই জীবনের পরে যদি আরো একটা জীবন এই পৃথিবীতে পাইতাম, তাইলে অনেক দূরের কোনো গ্রামে ভিটা বানাইতাম। যেই গ্রামের পাশ দিয়া বইয়া গেছে ঢেউ ছাড়া কোনো নদি। যেই গ্রামের মধ্যে তালগাছের মতো খাড়ায়া আছে ছোট বড় পাহাড়। বৃষ্টির দিনে আমি দাঁত কাঁপাইতে কাঁপাইতে উইঠা যাইতাম সবচেয়ে বড় পাহাড়টার মাথায়। সেইখান থাইকা কান পাইতা শুনতাম, ঘর ভাইঙা যাওয়া পাখিদের কান্দোনের চিৎকার। এক দৃষ্টিতে তাকায়া দেখতাম, গাছের পাতার মধ্যে বৃষ্টির একফোটা পানি ঝুইলা থাকতে চাইয়াও কেম্নে হুট কইরা পইরা যায়। তারপর পিছলায়া পিছলায়া পাহাড় থাইকা নামতে নামতে নদিতে যাইতাম। নদির মধ্যে ডুব দিয়া শুনতাম, খই ভাজনের মতো বৃষ্টির ফোটার শব্দ। নদির মইধ্যে গা ভাসাইয়া আসমানের দিকে তাকাইয়া দেখতাম, বৃষ্টির ফোটারা কেমন দল বাইন্ধা নাইমা আসে।

ঘুটঘুটে আন্ধার রাইতে খোলা মাঠে যাইতাম। যেইখানে বিলের পানিতে ভাইসা থাকা পদ্মফুল, আঁকাবাঁকা রাস্তার কিনারা ঘেইষা নানান রকম ঘাসের পাশ দিয়া দোলতে থাকা কাঁশফুল আর ইয়া বড় সবুজ ঘাসের মাঠের সব সৌন্দর্য ডাইকা যায় আন্ধারের পর্দায়। সেইখান থাইকা জোঁনাকপোকার রঙিন আলোর খেলা দেখতাম। পাখির কিচির-মিচির আর বাতাসের শু-শু আওয়াজ এক হইয়া আন্ধারের মইধ্যে একটা ঢেউ তুলতো। যেই ঢেউয়ের ধাক্কায় আমি ঘোরের মধ্যে পইরা যাইতাম। তারপর উপরের দিক তাকাইয়া দেখতাম, আসমানের রঙটাও পিচাশের মতো কালা; জোঁনাকপোকার মতো জ্বলতে থাকা তারাগুলা শুধু এইটা বুঝতে দিতো না। 

আর ভরা জ্যোৎস্নার রাইতে নদির মাঝখানে যাইয়া ছোট্ট একটা নৌকার উপর চিৎ হইয়া শুইয়া থাকতাম। আর ভাবতাম, নদিটার কি আজীবন এইভাবে চিৎ হইয়া শুইয়া থাকতে বিরক্ত লাগে না? সারাটা জীবন উপর দিয়া সাদা মেঘরে উড়তে দেইখা নদিটার কি ইচ্ছা করে না একটুখানি উড়াল দিতে? নৌকায় দোলতে দোলতে আরো অনেক কিছু ভাবতাম। ভাবতে ভাবতে মনের সুখে জ্যোৎস্নার দিকে দুই একটা কথা ছুইড়া দিতাম। জ্যোৎস্না তখন লজ্জা পাইয়া মেঘের আড়ালে লোকায়া যাইতো। আর আমি সেই আন্ধারে ধীরে ধীরে ঘুমায়া যাইতাম। শুধু কানের মধ্যে বাজতে থাকতো নৌকা আর পানির ধাক্কার চিকন চিকন শব্দ; ঘুমের ঘোরে আমার তখন মনে হইবো, বেহেস্ত থাইকা কোনো হূর নুপুর পায়ে পানির উপর দিয়া হাঁইটা হাঁইটা আমার দিকে আইতাছে।

আমি যদি মরণের পর আরেকবার পৃথিবীতে ফিরা আইতাম, তাইলে মানুষ থাইকা অনেক দূরে পালায়া যাইতাম। যতদূর পালায়া গেলে নিজের সুখ মাপার লাইগা অন্যের সুখের দিকে তাকাইতে হইতো না। যতদূর পালায়া গেলে অর্থের কাছে নিজেরে বেইচা দেওয়া লাগতো না। যতদূর পালায়া গেলে ইস্কুলের রোল নম্বর আমারে আলাদা করতো না। ততদূর যাইয়া, ঠিক ততদূর যাইয়া চিৎকার কইরা পৃথিবীরে জিগাইতাম, "কে কারে ভালোবাসে? কে নিজেরে ভালোবাসে?"। আমি জানি, পৃথিবী বৃষ্টি নামায়া কানতো, আর বর্জপাতের মতো চিৎকার কইরা কইতো, "কেউ কাউরে ভালোবাসে না, কেউ নিজেরে ভালোবাসে না"।

Saturday, April 23, 2022

শহুরে চিড়িয়া

ফুটপাত, সমান্তরাল ল্যামপোষ্ট,
পথিকের চোখ, খুঁজে নেওয়া আকাশ;
রং বদলে দেওয়া সোডিয়াম আলো।
শব্দের শরীরে মিশে থাকা, 
চলমান যান্ত্রিক কোলাহল, যানজট;
এবং ভীড়ের মাঝে একাকিত্বতা।
উঁচু নিচু দালানের জানালায়,
মাঝরাত্তিরের কান্না;
ঘুম কেড়ে নেয় চাঁদ;— আলোতে মিলায়।

এত এত রঙ, এত এত কোলাহল,
জানান দেয় এই শহর বেঁচে আছে।
তবু এ শহর বেঁচে থাকে !
বেঁচে থাকে এই শহরের চিড়িয়াদের
বিভ্রান্তিকর  হাসিমুখ, দ্বিতীয় মুখ।

Thursday, April 21, 2022

আত্নপ্রেম

নিজেকে এতোটা ভালোবাসি, এতোটা ভালোবাসি
যতটা ভালোবেসে কোনো বুলেট ছুটে যায় হৃদপিন্ডে।
নিজেকে এতো ঘৃণা করি, এতো ঘৃণা করি
যতটা ঘৃণা করলে নর্দমায় ফুটে উঠে একটি ফুল।

নিজের সাথে নিজের বনিবনা হয়নি বলে,
বারংবার গলা চেপে ধরেছি নিজের আত্মার।
শ্বাসবদ্ধ আত্মা তখন থুথু ফেলে আমার চোখে;
তখন আমার ঘোর কাটে। তারপর,
নিজের আত্মার গলা থেকে হাত নামিয়ে
থুথুমাখা চোখে ঝাপসা ঝাপসা দৃশ্য দেখি,
নিজের থেকে নিজে কতটা দূরে ছুটে গেছি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আত্মা জিজ্ঞেস করে,
"ভালোবেসে কখনো জড়িয়ে ধরেছিস নিজেকে?"

অন্ধকারকে যতটা ভালোবাসি,
ততটা ভালো নিজেকে বাসতে পারিনি বলে,
সূর্যের সকল আলো আমাকে করেছে অবহেলা।
যে আলোর ভয়ে অন্ধকারের কুয়ো থেকে বের হইনি কোনোদিন,
সেই আলোর অভাবেই কখনো দেখতে পারিনি নিজেকে।

এইসব বিভ্রান্তময় ঘোরের দিন শেষ হলে,
বেঁচে থাকার সাহস নিয়ে অন্ধকারের কুয়ো থেকে বের হলাম একদিন।
তারপর আমি দেখতে পারি,
নিজেকে সুখী রাখার সবকটি গুপ্তমন্ত্র নিজের শরীরেই লেখা।

প্রেমহীন প্রেম

উদ্যানে প্রেম, প্রেমের সংশয়।
গাঢ়ত্ব হারায় প্রেমিকার ঠোটের রং
প্রেমিকার লজ্জামাখা চোখ,
প্রেমিকের বিলাসী চাহনি।
ভেসে যাওয়া শীতল হাওয়া বেখেয়াল ,
প্রেমিকার চুলের গন্ধ প্রকট।

শরীরের দেওয়াল ঘেষে জন্ম নেওয়া প্রেম,
তবু প্রেম বেঁচে থাকে মানবীর শরীরে।
এ প্রেম খুন হয় ক্যালেন্ডারে ক্যালেন্ডারে।
উচ্ছিষ্ট হয় গোলাপ, প্রেমিকার প্রেম,
অচেনা হয় প্রেমিক, অপচয় হয় প্রেম।

Saturday, April 16, 2022

বিধ্বস্ত মানব

 একটা শরীর, ব্যর্থতার ছায়াতে ডুবে থাকা কোন এক মানুষের শরীর। যার প্রতিটি লোমকোপে জ্বলছে আত্নঘৃণার আগুন। যে আগুনে পুড়ে শরীর হয়ে গেছে কঙ্কাল। যে কঙ্কাল বয়ে নিয়ে চলে শুধুমাত্র একটি প্রাণ। যে প্রাণ ভুলে গেছে ভালোবাসে, ভালোবাসা পাওয়ার অভাবে যে প্রাণ ভুলে গেছে ভালোবাসার স্বাদ। পুড়ে যাওয়া শরীরে শুধুমাত্র দুটি চোখ ছলছল করছে। যেমন ছলছল করে, ভোরের সকালে ঘাসের উপর জমে থাকা দুই ফোটা শিশিরকণা। যে চোখ চায়, এক জোড়া চোখের নির্মল দৃষ্টি। যে দৃষ্টিতে থাকবে না কোনো বিনিময়, থাকবে শুধুই ভালোবাসা।

ঘৃণার রঙ নিয়ে বেঁচে থাকা সেই কঙ্কাল ছুটে চলে মানুষের থেকে অনেক দূরে। যতদূরে গেলে কোনো প্রাণ চোখ মেলে দেখতে পারবে না তার শরীরের আর্তনাদ। যতদূরে গেলে ছড়াবে না তার পঁচে যাওয়া শরীরের বিষাদের ঘ্রাণ। নদিতীরের শীতল বাতাসের বেগের মতো ছুটে চলে সে শরীর। ছুটতে ছুটতে মিশে যায় সূর্যের অন্ধকারে। যেখানে সূর্যের অভিশাপে শুকিয়ে গিয়েছে চোখের নির্মলতা। অন্ধকারের আশির্বাদে শরীর পেয়েছে বিষাদের কালো রঙ।

তারপর বাতাসে শুকনো পাতার ওলটপালটের মতো করে হেঁটে চলছে কোনো উদ্দেশ্যবিহীন গন্তব্যে। সূর্যের মৃত্যুর পর সে পৌঁছে গেছে এক অভিশপ্ত লোকালয়ে। যেখানে মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র লক্ষ নিজেকে বৃক্ষ বানানো। যে বুলেটের আঘাতে নিহত হয়েছে নিজেদেরই পূর্বপুরুষ, সেই বুলেটের বারুদের গন্ধ তাদের বেঁচে থাকার উপকরণ। 

বিভ্রান্ত সব মানুষের সংস্পর্শে পুড়ে যাওয়া শরীরে জন্ম নিয়েছে নতুন ত্বক। যার প্রতিটি কোষের সংযোগস্থলে পরগাছা হয়ে জন্ম নিয়েছে হতাশা। তার পুড়ে যাওয়া শরীরের ছাই তাকে উপহার দিয়েছে আত্নঘৃণার পোষাক। মানুষ হয়ে যে শরীরের জন্ম হয়েছিলো, সেই শরীর এখন নিজেকে বৃক্ষ বানাতে ব্যস্ত। নিজেকে পুতে দেয়ার জন্য ব্যর্থতার কোদাল দিয়ে খনন করে চলছে সময়ের ভূমি। নিজেকে বৃক্ষে পরিণত করাটাই এখন তার একমাত্র লক্ষ। যে লক্ষ তাকে নির্ধারণ করে দিয়েছে এই অভিশপ্ত মানবসভ্যতা। 

বিষাদময় এই শরীর তবুও স্বপ্ন দেখে। তবু স্বপ্ন দেখে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার। ইচ্ছে করে ব্যর্থতার কোদালকে পুড়িয়ে দিয়ে অভিশপ্ত লোকালয় থেকে অনেক দূরে চলে যেতে। যতদূর চলে গেলে কেউ জানতে পারবে না তার আর্তনাদের গল্প। যতদূর ছুটে গেলে সে খুঁজে পাবে নির্মল চোখ, অভিনয়হীনতা। যেখানে সে খুঁজে পাবে নির্মল দৃষ্টি, ভালোবাসা। যেখানে মানুষজনের লক্ষ নিজেকে বৃক্ষ বানানো নয়; বরং জীবনকে সহজ করা। যতটা সহজ করলে কেউ তার নিজের সাথে নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। যে লোকালয় স্বপ্নভঙ্গের অপরাধে সুখকে হত্যা করে না। বরং, বিচ্ছেদের আশির্বাদে ভালোবাসার চাষাবাদ করে।

যে প্রেম আমি চাই

একটা ঘর বানাতে চাই, যেখানে-
অদূরে থাকবে স্বচ্ছনদী,
কিনারা ঘেঁষে বালির চিকচিক;
কাশফুলের সাদা রঙের দোল,
দূর্বাঘাসে ছেয়ে যাবে মরুভূমি।

একটা মানুষের সঙ্গ চাই, যে-
পড়ন্ত বিকেলের ঠাণ্ডাবাতাসে
নীল শাড়ি নীল চুড়ি পড়ে
সুরেলা বাতাসে আবেগ উড়াবে।
ঘনিয়ে আসা আধারে কালো চুল উড়াবে,
ঐপাশের সাদা কাশফুল তার সঙ্গ দিবে।

একজোড়া চোখ চাই, যেখানে-
আমার নির্ঘুম চোখ ভুলে যাবে আমাবস্যা,
সঙ্গ দিবে আমার চন্দ্রবিলাসীতার।
বুঝে নিবে সকল ভাষার দায়ভার;
মলিন থাকবে আমার অপেক্ষায়,
অশ্রু ঝরবে আমার ভালবাসায়।

Sunday, April 10, 2022

মৃত্যু যতদূর- ততদূর উদাসীনতা

 ধরেন আপনি জেনে গেছেন আপনার জীবনে কতটুকু সময় বাকি আছে। ধরে নেন সেই সময় মাত্র এক ঘন্টা। ঠিক এক ঘন্টা পরে আপনার মৃত্যু। তাহলে আপনি কি করতেন? পরিবার এবং প্রিয় মানুষকে সময় দিতেন? কিংবা একদিন বা ২৪ ঘন্টা সময় আছে। তাহলে কি করতেন? আগের করণীয়তার সাথে তওবা করতেন? নিজের পাপ কাজের জন্য কান্নাকাটি করতেন? যদি এক সপ্তাহ থাকতো? তাহলে তার সাথে আর কি কি করতেন? যাদের কাছে নিজেকে দোষী মনে হয়  তাদের কাছে ক্ষমা চাইতেন? কিংবা আর্থিক ঋণমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতেন? যদি এক মাস সময় পেতেন? আপন মানুষদের একটু বেশি খুশি রাখার চেষ্টা করতেন? 

এমন যদি হতো আপনাকে সেই নির্দিষ্ট সময় বলে দেওয়া হলো, এবং সেই সময় পঞ্চাশ বছর। তাহলে? তাহলে কিচ্ছু করতেন না। প্রথম উনপঞ্চাশ বছর একদম বেখেয়ালী জীবনযাপন করতেন। শেষের এক বছরে সেই এক্টিভিটিজ। আসলে আমরা সময়সীমা জেনে গেলেই সাবধান হই। শুধুমাত্র তখনই নিজেকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পরি। কিন্তু জীবন তো আমাদের সময়সীমা জানায় না। জীবন চলে লিনিয়ার গতিতে। যখনই তার শেষ সীমানা খুঁজে পায়, তখনই শেষ হয়ে যায়। মূলত জীবন নিজেও জানে না তার সীমানা কতদূর।

আমরা ধরেই নিই যে, আমরা নাতি নাতনীর যৌবন দেখে মারা যাবো। সেই হিসেব করেই তো সুদূর প্রসারী চিন্তা করি, পরিকল্পনা করি, বাস্তবায়ন করি। জীবন হইলো বেলুনের মতো। যেকোনো সময় ঠাস কইরা ফুইটা যাইতে পারে, যাইতেই পারে। কিংবা জীবন একটি সুন্দর ফুলের মতো, কলি থেকে ফুলের সর্বোচ্চ সৌন্দর্য ভেদ করে একসময় শুকিয়ে ঝরে পরবে, ঝরে পরবেই। এইযে জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, এইটা কিন্তু নিশ্চিত। গণিতের ভাষায় সম্ভাবনা এক বা সম্পূর্ণ। এইটা আমরা সবাই জানি, বিশ্বাস করি। কিন্তু অনুভব করি না। অনুভব করতে না পারাতে কি হচ্ছে? বিশ্বাসটা শুধু বাহ্যিক রূপে দাঁড়িয়ে আছে, ভাষ্কর্যের মতো। ভাষ্কর্যে শরীর থাকে, প্রাণ থাকে না।

Tuesday, March 29, 2022

বৈশাখী ঝড়

 বাইশে বৈশাখ। মাত্রই বিকেলের শুরু। গাঢ় অন্ধকার। কালো মেঘেরা নিষ্প্রাণহীনতায় উড়ছে। একদল পাখি যেনো বাসাতের বেগে উড়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। ঘুড়ি প্রিয় কিশোরদলও নাটাই হাতে দৌড়ায়। ছোট ছোট উলঙ্গ শিশুরাও হা করা বড় মুখ নিয়ে ছোট চোখে তাকিয়ে থাকে হাসিবিহীন ছেলেমানুষি আনন্দে। বেগ বাড়ছে ঘূর্ণিবাতাসের। মায়ের বকুনি শোনার আগে বাড়ি ফেরার তাড়া শিশুকিশোরের। একপাল গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার তাড়া মধ্যবয়সী লোকটির। তের বছর বয়সী ছেলেটাও ছাগলের খুঁজে অক্লান্ত।

নদীর ঢেউ যেনো ঝড়ের ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। ঢেউয়ে ঢেউয়ে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে উঠছে জলকণা। প্রবল বাতাসে নদীর ওপারের কলাগাছের ঝোপটাও বাতাসের তালে নৃত্যরত। বাড়ীর পাশে সারি সারি সুপারি গাছ ঝড়ো বাতাসে বিদ্রোহী পতাকার মত উড়ছে। বাঁশবাগানের এলোমেলো ছোটাছুটিতে কিছু বাঁশপাতা বাড়ীর উপর দিয়ে এসে বাতাসে উড়ছে। সাদাকালো আকাশ, ঘোলাটে দূরদৃষ্টি, অন্ধকার নেমে এসেছে আকাশে, বৃষ্টি নেই, ধূলিময় বাতাস, এই বুঝি ঝড় এলো।

ঝড়োয়া বাতাসে ধূলি ধূসরিত রাস্তায় শক্তি বেড়েছে বৃদ্ধার হাতের লাঠির। বাড়ির সামনে বাচ্চাদের ছোটাছুটির সাথে তাল মেলাতে বাদ দেয়নি তিনটি বাছুর আর ছাগলের চার বাচ্চা। বাড়ীর মেঝো বউটির চোখে ঠোটে দেড় বছরের বাচ্চাকে আগলে রাখবার আনন্দ।

অদূরে মফস্বল। মেয়েদের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। সাদা পাজামা আর সাদা স্কার্ফ এর মাঝে সবুজ জামা পরা স্কুল বালিকারা বিচ্ছিন্নভাবে দলবেঁধে স্বগণ্ডগোলে হেঁটে যায়। তাহাদের হাসিমুখে চিকন গলার স্বর প্রবল বাতাসকে অগ্রাহ্য করে। দলবাঁধা কিশোরীর আচমকা হাসির শব্দ ঝড়োয়া বাতাসকে হার মানায়, প্রকৃতিকে উন্মাদ করে তুলে । তবুও তাহাদের পায়ে বাড়ী ফেরার তাড়া, দ্রুততা । গোলাপি ঠোটের কম্পনে সাদা দাঁত আর জিহ্বার লাল পৃষ্ট সাদাকালো আকাশের পূর্ণতা। হাসিমাখা ফোলা গাল প্রত্যুত্তর দিয়ে যায় বান্ধবীর হাসির। তবুও কেয়ার হাসিমুখে ভয়ার্ত চোখে সন্ধানী দৃষ্টি। অপেক্ষারত হৃদয় জানে নিখোঁজ সংবাদ। কি যেনো নেই, কে যেনো নেই! সাজিদ কই?

পৃথিবীর আর্তনাদ

 মধ্যরাত। আধার আকাশে অজস্র তারা। শব্দহীন আকাশ, কোলাহলবিহীন চারিপাশ। নিয়ন আলোর ল্যাম্পপোস্ট, হিলিয়াম আলোয় রাতের শহরে আলোকিত জানালার মানবহীনতার আর্তনাদ ছেয়ে গেছে যান্ত্রিক শহর, যাপিত জীবন। কংক্রিটের দেয়ালে আলো আধারের এই আর্তনাদ কারো চোখের পিউপিল ভেদ করে মগজে ভাসায় সূর্যের এলগরিদম ; হাহাকার বুকে কান্না আসে দীর্ঘশ্বাসের ।

স্থির চোখে খোলা ছাদে দোলনায় দোল খেয়ে আমি শাহীদ আকাশের তারা দেখি, তারাদের সাথে কথা বলি, আত্নকথোপকথন ! মাঝরাতে এক শহর আধারের তন্দ্রা নেমে আসে আমার চোখে ; অক্লান্ত শরীর ছুঁয়ে যায় এক মেঘ শীতলতা। কনজাংটিভা আবৃত হয় চোখের পাতায়। দূরদৃষ্টি থেমে যায়। আমার চোখ দেখে আমাকে। নিথর শরীর দোলতে থাকে খোলা আকাশের নিচে।

আমার অবচেতন মনকে ভর করে আমি উপরে উঠছি। দেখছি, খোলা ছাদের এককোণে পাতা দোলনাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন শাহীদ দোলছে। যেনো এই শহরের সুখ তার খাদেম। সকল সুখেরা তার চোখে ভর করে আছে, জেগে আছে শিয়রে । রাতের নিরব আধারের বাতাস তার ঘুমন্ত শহরের ঘড়ির কাটা থামিয়ে দিয়েছে, ভুলাচ্ছে তার জগত।

আমি আরো উপরে উঠছি। দেখছি পুরো একটা শহর। উঁচুনিচু দালান , রাজপথে যানজট, আলোর কোলাহল, যান্ত্রিক মানব । তারার মত জেগে আছে শহরের আলো ; যেনো শহরজুড়ে একটুখানি লোডশেডিং এর আবদার। ইটের পাহাড়ে আলোকিত জানালার ভেতরের চিড়িয়া নির্ঘুম। সাদাকালো চোখে মিথ্যের রঙ। গলা থেমে গেছে আজ প্রযুক্তির আশীর্বাদে ; হলুদ রঙা মুখোশ সাজাচ্ছে মিথ্যে অনুভূতি, কিবোর্ডে জন্ম নিচ্ছে নাগরিক হাসি। মনে জমানো আছে আগুনের খনি, আবেগ পোড়াচ্ছে। উন্মাদী ভালবাসা হারিয়ে যাচ্ছে । এই শহরে প্রেম আছে, ভালবাসা নেই । হ্যাঁ প্রেম! শরীরকেন্দ্রিক প্রেম। ইভান ভাইয়ের গানের কথায়, "নেশা লাগে ঠোটে, নিশানা চোখে" ।

আমি আরো উপরে উঠতে উঠতে একদম পৃথিবীর বাইরে চলে এসেছি। আমি মহাশূন্য থেকে পৃথিবী দেখছি। দেখছি নাগরিক মানুষের যান্ত্রিক সংসার। সূর্য উঠে সূর্য ডুবে, ঘড়ির কাটা ১২-৬-১২ খেলা করে, আলো আঁধারের রঙ জ্বলে নিভে। এই পৃথিবীতে আবেগের চেয়ে অর্থের দাম বেশী ; ভালবাসার চেয়ে বিলাসিতার দাম বেশী।

আমি এতো উঁচু থেকেও স্পষ্ট শুনতে পারছি পৃথিবীর আর্তনাদ। চিৎকার করে আমি পৃথিবীকে বলছি , " পৃথিবী, কেমন আছো ? কেমন আছে তোমার মানব চিড়িয়ারা? "

অপ্রেমিক হয়ে উঠা

বয়স যখন অনুর্ধ আঠারো
তখন আমার প্রেম ছিল না,
তবু আমি প্রেমিক ছিলাম।
এখন আর প্রেমিক হতে পারি না।

কৈশোরে চোখের যে লজ্জা ভয় হয়ে যেতো,
তারুণ্যে সেই লজ্জা বানাতো দুঃসাহসী।
কৈশোর তারুণ্যে ছিল প্রেমিকের চোখ,
যৌবনে মৃত আবেগ, প্রেমিকা সর্বনাশী।

প্রেমিক থেকে অপ্রেমিক হওয়া মানুষের,
বাহ্যিক কান্না আসে না। 
ভালোবাসতে ভুলে যাওয়া মানুষ,
নিজেকে খুঁজে পায় না।

উপহার

 মানুষ মানুষকে কবিতার বই উপহার দেয়, গল্প-উপন্যাসের বই উপহার দেয়। কিন্তু কেউ কবিতা বা গল্প-উপন্যাস উপহার দেয় না। কারণ কবিতা, গল্প, উপন্যাস এইসবের বাহ্যিক কোনো গঠন নেই। সকল উপহার মানুষ বস্তুগত রূপে দিতে চায়। অথচ আমাদের জীবনে অন্যদের থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় উপহারগুলোরই কোনো বাহ্যিক রূপ নেই। যেমন, মায়ের কোলে তার শিশুর প্রতি ভালোবাসা, শৈশবের বন্ধুত্ব, স্কুল টিচারের ধমক কিংবা বেতের বারি, প্রেমিকার সাথে কাটানো মুহুর্ত, ভালোবাসা নিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার দুই জোড়া চোখের কথোপকথোনও উপহার; খুব সুন্দর উপহার। কারণ আমরা সময়ের পরে এইসবই মনে রাখি। অথচ উপহার হিসেবে শুধু বস্তুগত বিষয়ই খুঁজি। একটি পছন্দের গানও হতে পারে একটি উপহার। যেমন উপহার দিয়েছিলো আমার প্রাক্তন প্রেমিকা আমাকে। সেই গান যেনো তার নামে রেজিস্ট্রি করে রাখা আছে। এবং এই উপহার হারানোর সকল সম্ভবনা হারিয়ে গেছে। সেই গান শুনবো আর তার কথা আমার মনে পড়বে না; এমন কখনো হতে পারে না। এর চেয়ে সুন্দর উপহার আর কি-বা হতে পারে!

তাত্ত্বিক প্রেমিক

আমার একজন তাত্ত্বিক প্রেমিকা প্রয়োজন।
যে প্রেম নয়, প্রেমতত্ত্ব নিয়ে আসবে।
যার সাথে কথা হবে কবিতায় কিংবা চোখে
চুমু হবে কথাদের ঘর্ষণে, যুক্তির ওলট-পালটে
মন চাইলে কাছে আসবে দিনে একশোবার
কিংবা দূরে থাকবে একশো বছর,
তারপর হঠাৎ একদিন মন চাইলেই,
হুট করে এসে বলবে "ভালবাসি"
এ নিয়ে কারো কোনো অভিমান থাকবে না। 

আত্ন-অপ্রকাশ

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রজাপতি যদি জানতো,
সে বিশ্বের সমগ্র সৌন্দর্যকে ধারণ করে।
তাহলে নিজেকে লুকিয়ে রাখার অপরাধে,
অন্ধকারে বিসর্জন দিতো উড়ে বেড়ানোর আনন্দকে।
অথচ সে নিজের সৌন্দর্যকে জানে না বলেই,
সৌন্দর্যের লোভে ঘুরেফিরে অসুন্দরেও আনন্দে হাসে।

পৃথিবীর প্রতিটা মুহুর্ত নতুন করে জন্ম নেয়।
পৃথিবীর প্রতিটা হাসি নতুন করে জন্ম নেয়।
পৃথিবীর প্রতিটা প্রেম নতুন করে জন্ম নেয়।
নতুন করে জন্মায় না শুধু মানুষ, তবু
নতুন করে জন্ম নেয় মানুষের সবকিছু;
নতুন করে জন্ম নেয়, তোমার আমার--
ঠোঁটের কোণের হাসি, চোখের মিথ্যে পানি,
আমাদের যত ভুল ভালোবাসাবাসি,
প্রেমের মুখোশ পরে অপ্রেমের অনুভূতি।
গভীর অন্ধকারে পৃথিবীর চুম্বনে বুঝেছি,
নিজেরাই তো নিজেদের খুনী।

আমি বলি এইসব ভুলে চলো, একটুখানি বাঁচি
যেমন করে বেঁচে থাকে,
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রজাপতি।
যেমন করে বেঁচে থাকে,
সদ্য জন্মানো ছোট্ট শিশুটি। 

আমাদের চোখ

 পৃথিবীতে যতগুলো মানুষ আছে, ঠিক তার দিগুণ আছে মানুষের চোখ। আর তাই আমরা দৃশ্যের ভিতর দেখি মিথ্যের ছায়া, আর মানুষের ভিতর রোবট। পৃথিবীর ইতিহাসে আজীবন দৃশ্যমান বিষ্ময়কর হয়ে থাকবে এই মানুষের চোখ। কখনো আনন্দের প্রতীক হয়ে উঠে আমাদের চোখ, কখনও কালো মেঘ। কখনওবা ঘূর্ণিঝড়ের মতো চলতে থাকে জীবনের অনিশ্চিত সব হিসেব, কিংবা যুদ্ধ শেষে বিধ্বস্ত শহরের মতো হতাশার ক্লান্তি নিয়ে থমকে যায় আমাদের চোখ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিরিয়াল কিলারের চোখেও ভেসে উঠে প্রেমের চিহ্ন। কিংবা নিজের মাকে হত্যা করার পূর্ব মুহূর্তে যে চোখ ছিলো আগুনের মতো উত্তাপ, রক্তের মতো লাল; মাকে হত্যার করার পর সে চোখে নামে বৃষ্টি, নির্মল গ্রামের শেষ রাতের বৃষ্টি। কিংবা পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতু প্রেমিকা, "লোকে জানবে" এই ভয়ে যার প্রেমটি এখনো হয়ে উঠেনি, যার চোখ সদ্য ফুটে উঠা ফুলের মতো লাজুক; সেই চোখও হয়ে যেতে পারে মরুভূমির মতো শুষ্ক।

আমাদের দৃশ্যমান চোখেরই যখন এতো রূপ। তখন, যে চোখ অদৃশ্য কিংবা যে চোখে ভর করে একজন অন্ধ মানুষ হেঁটে চলে; সেই চোখের না জানি কতরূপ! সেই চোখ যদি দেখা যেতো, তাহলে হয়তো আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতাম। মুগ্ধ হয়ে ভালোবেসে যেতাম একে অপরকে। কিংবা, আজীবন দূরে থাকতাম একে অপর থেকে। ভাগ্যিস আমাদের চোখ কারো অদৃশ্য চোখকে দেখতে পারে না।

বোবা প্রেমিক

তুমি উত্তাল চলমান নীরব স্রোতের এক চিরযৌবনা বহমান নদী। যে নদীতে সমুদ্রজয়ী প্রেম বিজয়ী নাবিকের নিষেধাজ্ঞা জারী। আমি তাই গাঙচিল হয়ে উড়ে যাই তোমার বক্ষরেখা বেয়ে। হঠাৎ দেখলাম একটা মাছরাঙা এসে তোমার শরীর ছুঁয়ে নিয়ে গেলো একটি প্রাণ, আমি কিচ্ছু বলিনি। এরপর দেখলাম, একগুচ্ছ কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছে তোমার শরীর ছুঁয়ে, আমি কিচ্ছু বলিনি। তারপর দেখলাম, একটি কিশোরের দল লাফাচ্ছে তোমার শরীরে, আমি কিচ্ছু বলিনি। শেষমেশ যখন আমি উড়তে উড়তে ক্লান্ত ভীষণ, তখন দেখলাম তোমার সত্ত্বা মিশে যাচ্ছে সমুদ্রে। আমি কিচ্ছু বলিনি। শুধু তোমার থেকে চোখ সরিয়ে দেখি, আমি তোমার বক্ষ বেয়ে আসলেও আমার ছায়া ছিল শুষ্ক মাঠের কিনারা ঘেষে। আমি হতাশ হইনি। শুধু, শুধু সাগরের মাঝে তোমারে খুঁজতে গিয়ে– আমি তোমারে পাইনি।

পরিচয় বদল

ধরো, ত্রিশ বৎসর পর হঠাৎ একদিন
'পৃথিবীটা গোল' থিওরিতে আমাদের আবার দেখা হয়ে গেলো,
ততদিনে আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।
আমার হাতের স্পর্শে তোমার যে শরীর এখন চঞ্চল হয়ে উঠে
তখন সে শরীর থুবড়ে যাবে বয়সের স্পর্শে। 
আমার ঠোঁটের স্পর্শে তোমার যে ঠোঁট আরো রক্তিম হয়ে যায়
তখন সে ঠোঁট রক্তজবার মতো লাল হবে সবুজ পানপাতায়।
এইযে এখন তুমি আমার যে হাতটি শক্ত করে ধরে আছো
ততদিনে এই হাত শক্ত করে ধরতে শিখে যাবে বুড়োদের লাঠি।
আজকাল যে ঘন কালো চুলে তুমি হাত বুলিয়ে দাও
ততদিনে এই চুল বকের ডানার মত সাদা হয়ে যাবে।

তখন আমায় চিনতে পারবে?
তোমার আজকের এই প্রেমিককে?
চিনতে পারবে আমার এই চোখ?
যেখানে তুমি তোমার সমুদ্দুর খুঁজে পাও
নাকি, ততদিনে আমাদের চোখে বসবাস করা
মোটা গ্লাসের চশমার অজুহাত দিবে?
সেদিন তোমার মনে পড়বে? আমাদের শেষ চুমুর কথা?
মনে পড়বে? শেষ কবে আমার জন্য কেঁদেছিলে?
নাকি ভুলে যাবে কি আমার নাম? কে আমি ছিলাম?

আমি একদিন প্রেমিক হবো

আমি একদিন প্রেমিক হবো,
পুরোনো ক্যাসেটের মতো আবেগ নিয়ে ভালোবেসে যাবো।
আমি একদিন প্রেমিক হবো,
এই লণ্ডভণ্ড শরীরে এলোমেলো চুল নিয়েই।
আমি একদিন প্রেমিক হবো,
পৃথিবীর সব বিষাদ মুছে দিয়ে তোমায় চুমু খাবো।

আমি একদিন ঠিক প্রেমিক হয়ে যাবো,
যেভাবে মাগরীবের আজানের সময় ঘরে ফিরে শৈশব।
যেভাবে শীতের ভোরে ঘাসেরা করে স্নান।
যেভাবে মানুষের হৃদপিণ্ড হুট করে থেমে যায়।
যেভাবে কেঁদে উঠে সদ্য জন্মানো শিশুটি।

অপ্রেমিকের কবিতা

আমি একটি কবিতা লিখতে চাইলাম, 
তারপর দেখতে দেখতে একটি বছর কেটে গেল। 
আমি ঘোরের মাঝে একটি লাইন-ই আওড়াতে থাকলাম,
"তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে- কোনো এক চাঁদহীন রাতে"। 
তারপর আমার ক্লান্ত মগজ বিশ্রাম নেয়,
ভরা আমাবস্যার নক্ষত্রদের দিকে তাকিয়ে
কোনো সবুজ ঘাসের মাঠে, শীতল বাতাসে।
আমার অপ্রেমিক হৃদয় নেশায় বোধ হয়ে থাকে
ভরা পূর্ণিমায় নদীর বুকে, যেনো তার
একহাতে হুইস্কির বোতল, অন্যহাতে প্রেমিকার শেষ চিঠি।
তারপর ক্যালেন্ডারের পর ক্যালেন্ডার বদলায়,
আমার আর প্রেমিক হয়ে উঠা হয় না,
আমার আর কবিতা লেখা হলো না।

আমার কবিতা সেই একটি লাইনেই আটকে রইল,
তারপর কেটে গেলো আরো একুশটি বছর।

নববধুর জবানবন্দি

একদিন আমি নদীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
কখনো কাউকে ভালোবেসেছো?
নদী বললো,
আমাকে ছাঁয়া দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
সারিসারি গাছগুলোকে ভালোবেসেছিলাম,
কিন্তু আমার ভাগ্য আমাকে প্রবাহিত করেছে প্রতিনিয়ত।
এখন আমি আকাশ ভালোবাসি,
ইচ্ছে হলেও তার সীমানার বাইরে যেতে পারি না।

একদিন আমি বৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
কখনো কাউকে ভালোবেসেছো?
বৃষ্টি বললো,
যখন আমি মেঘ ছিলাম,
আমার সাথী হয়ে উড়ে চলা মেঘকে ভালোবেসেছিলাম
কিন্তু আমার ভাগ্য আমাকে ঝরিয়ে দিয়েছে।
এখন আমি পাতাল ভালোবাসি,
আমার বসবাস এখন এখানেই স্থায়ী।

একদিন আমি গাছকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
কখনো কাউকে ভালোবেসেছো?
গাছ বললো,
ক্লান্ত দেহ নিয়ে ডানা ঝাপটে
যে পাখি বাসা করেছিল আমার ডালে
তারে আমি ভালোবেসেছিলাম।
বৈশাখের কোনো এক শেষ রাত্তিরে
সে ডাল ভেঙে গেছে উত্তর অনিলে।
এখন আমি জমিন ভালোবাসি,
যেখানে আমার অস্তিত্ব স্থায়ী।

Monday, March 28, 2022

আমাদের প্রতিবিম্ব

আমি শেষরাতে একটা কবিতা লিখে
পরদিন সন্ধ্যায় তোমার হাতে দিলাম,
তুমি অস্ফুটে স্বরে বললে উঠলে,
ওমা! কবিতা কোথায়? এতো দুঃখ।

তুমি আসবে বলে সেদিন বিকেলে,
একমুঠো ঘাসফুল ছিড়ে, চুড়ি বানালাম।
ভালোবেসে পরিয়ে দিলাম তোমার হাতে।
তুমি বিস্মিত হাসিতে ছুঁয়ে দেখলে, আর বললে,
তুমি না ঘাসফুল খুব ভালোবাসো? তাহলে ছিড়লে কেনো?
 
আমি তোমার উনিশতম জন্মদিনে দিয়েছিলাম,
একজোড়া কবুতরের আজন্ম মুক্তি।
তুমি অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বললে,
ওমা! আমাকে দিলে কোথায়? সেতো উড়িয়েছো।

এ শহর বড্ড মিথ্যেবাদী

আমার হৃদয় বলছে তুমি আছো,
আমার শরীরে তোমার ছুঁয়ে যাওয়া স্পর্শ বলছে তুমি আছো।
আমার অবচেতন মন বলছে তুমি আছো।
আমার স্বপ্ন বলছে তুমি আছো।
অথচ এই শহর বলছে তুমি নেই।

প্রিয়তমা, তুমি ফিরে আসো,
ফিরে আসো হৃদয়ের খুব কাছে।
চোখে চোখ রেখে বলে যাও,
এ শহর বড্ড মিথ্যেবাদী।

সিগারেট বনাম প্রেম

প্রিয়তমা,
তুমি আমায় বারণ করেছিলে সিগারেট ফুকতে
এতে নাকি ফুসফুস পুঁড়ে যায়?
এখন আমি সিগারেট ফুকি না।
অথচ দেখো, এখন আমার হৃদয় পুঁড়ে যাচ্ছে
কারণ তুমিই বলেছিলে আজীবন ভালবাসতে।

হৃদয়ের বসতবাড়ি

শরীরতত্ত্বের ডাক্তারেরা কি বলতে পারবে?
হৃদয়ের বসতবাড়ি কোথায়?
শরীর থেকে কতদূর?
আত্নার সাথে তার কি অমিল?
হৃদপিণ্ডের খুব কাছে?
ডাক্তারেরা বলবে, মগজের হাইপোথ্যালামাসে।
বিশ্বাস করো প্রিয়তমা, ওসব ভুল কথা
আমার তো বুকের ঠিক ঐখানটাই ব্যথা,
যেইখানে তুমি কান পেতে শুনতে চাইতে, "ভালবাসি কিনা!"

জীবন বনাম হৃদয়

প্রিয়তমা,
জীবন আর হৃদয়ের মাঝে পার্থক্য বোঝো?
জীবন হচ্ছে একটি সমুদ্র;
সমুদ্রে আছে অজস্র প্রাণ,
সমুদ্র হচ্ছে সবিস্তর গভীর।
আর হৃদয়?
হৃদয় হচ্ছে সেই সমুদ্রের নীল পানি!
প্রিয়তমা তুমি কি জানো,
সমুদ্র থেকে পানি শুকিয়ে গেলে কি হবে?
আমি বলছি,
প্রেমিকা শব্দের আগে প্রাক্তন বসালে যা হয়। 

প্রাক্তন

মেলাদিন পরে আবার আমার মনে পড়লো,

আমি তোমারে ভালবাসতাম!

মেলাদিন পরে আবার আমার মনে পড়লো,

তোমারে কাছে ডাকতাম, পাশে চাইতাম।

তোমার গলার একটা গান শোনার লাইগা

মাঝরাইতে কেমনে হাসাইতাম।

তুমি কি এখন মাঝরাইতে গান গাও না?

রাইতের খাবারের কথা ভুইলা যাও না?

বিকাল সন্ধ্যায় বাসা থাইকা বাইর হইলে,

তোমার বাসার সামনের গলির মোড়ে

আমারে খুঁজো না?

নাকি তোমার মতোন,

তোমার বাসাটারেও বদলাইয়া ফালাইছো!


মেলাদিন পরে এখনও আমার মাঝেমধ্যে অসুখ হয়

জ্বর মাপার উছিলায় এখন কি আর তোমার

আমার কপাল ছুঁইতে ইচ্ছা করে না?

বেলপুরির বাহানায় গলির মোড় ঘুড়াইয়া

এখন কি আর রাস্তা বাড়াইতে মন চায়না?

"আমি শুনেছি সেদিন তুমি" গানটা হুনলে,

আমার কথা মনে পড়ে না?

নাকি গানটাই আর হুনো না, গাও না?

দ্যাহো আমিও কেমন বদলাইয়া গেছি,

“বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি”-তে তোমারে চাইনা।

অথচ দ্যাহো,

তোমার রবীন্দ্রনাথ বদলায় নাই

আমার জীবনানন্দ দাশও বদলায় নাই

তোমার নীল আসমান বদলায় নাই

আমার রাইতের আন্ধারও বদলায় নাই

তোমার মতোন,

তোমার ভেজা চুলের গন্ধটাও কি বদলায়া গ্যাছে?


মেলাদিন পরে এখনও আমার কাছে,

"প্রেমিকা" শব্দটার চেয়ে তোমার নামটা প্রিয়।

তোমার দেওয়া আমার ডাকনামটা কি ভুইলা গেছো?

নাকি অন্য কাউরে দিয়া দিছো?

আচ্ছা, মানুষ বদলায়া ভালোবাসান যায়?

ভালো যদি বারবার বহুজনরে বাসা যায়

তাইলে আমরা তারে ভালোবাসা বলি ক্যান?

আমি জানি ভালোবাসা হইলো তোমার মতন,

যার কোন বিকল্প নাই, অন্যত্র নাই।


আচ্ছা, তুমি এহন যেই শহরে থাহো,

সেই শহরে কেউ বকুল কুড়ায়া আনে?

তুমি এহন যেই রাত্তিরে জাগো,

সেই রাত্তিরে কেউ গান শোনার আবদার করে?

আজকাল যখন ঘুমায়া থাকো,

তোমার ঘুম জড়ানো কণ্ঠ শোনার লাইগা ফোন আসে?

বিকালের আসমানে মেঘ করলে,

বৃষ্টির প্রার্থনা নিয়া কেউ রাস্তায় দাড়ায়া থাকে?


অথচ আমি জানি,

আমি তোমারে ভালবাসি না

এম্নে কি ভালোবাসান যায়?

অবশিষ্ট প্রেম

আমার এক চোখ ফেটে রক্ত ঝরছে,
অন্য চোখ শীতল- প্রেমিকা হাসে।
আমার এক কান উত্তপ্ত হয়ে আছে যন্ত্রণায়,
অন্য কানে প্রেমিকার কণ্ঠ 'ভালবাসি ভালবাসি'।
আমার এক নাসারন্ধ্রে জ্বরের উত্তাপ,
অন্য নাসারন্ধ্রে প্রেমিকার ঘন শ্বাস।
আমার মুখগহ্বর মরুভূমির মতো তৃষ্ণার্ত,
ঠোঁটে লেগে আছে প্রেমিকার ঠোঁটজোড়া।
আমার বুকের ডানপাশে ফুসফুস ভরে গেছে নিকোটিনে,
অন্যপাশে প্রাণ জেগে আছে প্রেমিকার ভালবাসায়।
আমার শরীর শুকিয়ে গেছে প্রেমহীনতায়,
আমার মন বেঁচে আছে প্রাক্তনের ভালবাসায়।

অপ্রেমিকের আত্নপ্রকাশ

আমি সেই প্রেমিক,
যাকে আশির্বাদ করেছিলো পৃথিবীর কাল বিজয়ী বিচ্ছেদেরা।
আমি সেই প্রেমিক,
যাকে নতজানু হয়ে সম্মান করেছিলো পৃথিবীর সমগ্র বিরহ।
আমি সেই প্রেমিক,
যাকে দেখা মাত্র সুখের কসাই গেয়ে উঠতো আনন্দের গান।

আমি সেই মহাপুরুষ,
যে পাজরের ভেতর হৃদয় নয়, হৃদপিণ্ড বহন করে।
আমি সেই মহাপুরুষ,
যে রক্তে-মাংসে গড়ে উঠে, নিজের কঙ্কালে ভর করে চলে।
আমি সেই মহাপুরুষ,
যে মগজে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে, মৃত্যুর দিকে ছুটে চলে।

আমি সেই হৃদয়বান,
যার জন্য কান্না করতে শিখেছে পাহাড়, নাম দিয়েছি তার ঝর্ণা।
আমি সেই হৃদয়বান,
যার শরীরে চামড়ার চেয়েও কাছে মিশে আছে - আত্নঘৃণা।
আমি সেই হৃদয়বান,
যার জন্য মায়ের বুকের ভেতর বয়ে চলে নরকের সুখ।

কর্পোরেট প্রেমের জন্ম

আমি একটি বোমার গাছ লাগিয়েছিলাম,
যত্ন করে প্রতি সন্ধ্যায় মদ ডালতাম গাছের গোড়ায়।
সিগারেটের ছাইকে ছিটিতে দিতাম প্রতিটি শাখা-প্রশাখায়।
হাজার বছর চাষাবাদের পর গাছে একটু ফুল ফুটলো,
পৃথিবীর শেষ প্রেমিক এসে ফুলটি ছিড়ে নিয়ে
তার প্রেমিকাকে উপহার দিয়ে বললো, "ভালোবাসি"।
পৃথিবীর শেষ প্রেমিকা ফুলের নাম দিলো 'গোলাপ'।
তারপর ফুলটি বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেলো পৃথিবীর প্রেম।
এরপর থেকে আমরা প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য,
সকলেই হয়ে গেছি কর্পোরেট প্রেমিক-প্রেমিকা।

মানুষ এবং মানুষ

কখনো নিজের দিকে তাকানোর সাহস হয় নি বলে,
আজীবন তাকিয়ে ছিলাম আকাশের দিকে- কিংবা,
যারা তাকিয়ে থাকে নিজেদের দিকে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি জানতে পেরেছি,
মূলত আকাশ বলে কিচ্ছু নেই।
যতদূর চোখ যায়, ঠিক তার ঠিকানায়
যে নীল রঙ দৃশ্য আঁকে, তা শুধু অন্ধদের প্রাচীর।

যেসকল মানুষ নিজেদের দিকে তাকিয়ে থাকে,
তাদের থেকে আমি শিখেছি,
অন্যদের থেকে শেখার কিছু নেই।
জীবন হলো তথাকথিত আকাশের চেয়েও বিশাল,
এখানেও মেঘেদের মতো খেলা করে ঝাপসানো স্বপ্ন।

এরপর যখন আমি,
অন্ধকার থেকে বেরিয়ে নিজের দিকে তাকালাম-
নিঃসঙ্গ চাঁদের মতো উলঙ্গ এক শরীর দেখতে পেলাম।
যার কপালে খুদাই করে লেখা আছে "আত্নঘৃণা"।

তারপর আমি ভালোবাসার উদ্দেশ্যে,
মানুষের ভীড়ে ডুকলাম, দেখতে পেলাম-
মরিচিকার পোশাক পরে তাকিয়ে আছে আকাশে।
চোখ ঝলসে গেছে সূর্যের উত্তাপে। তবু,
"ভালোবাসা পাইনি বলে, ভালোবাসা দেইনি" সমীকরণে,
একে অপরকে চোখে চশমা দিয়ে দেখছে।
শরীর থেকে শরীরের দূরত্ব ক্রমাগত কমছে,
হৃদয় থেকে হৃদয়ের দূরত্ব ক্রমাগত বাড়ছে।

এতো সভ্য জনতার ভীড়ে আমি এক উলঙ্গ নিঃসঙ্গ মানব।
যার চোখ এখনো নির্মল আর্দ্র, চশমাতে অনভ্যস্ত।
যে চায় সহশ্র মানুষের ভীড়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে।
যে চায় ভালোবেসে হৃদয় থেকে হৃদয়ের দূরত্ব কমিয়ে নিতে।

অন্ধের অন্ধকার

বিষাদ দিনযাপনের ইতিহাস থাকুক শহর জুড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন দেখতে পাই, নষ্ট হওয়া খাবারের গন্ধে কতটা উন্মাদ দাঁড় কাক। ঘৃণাভরা কোলাহল ভাঙলেই য...